একাকি নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, জামাতে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি সওয়াবের। (বুখারি: ৬৪৫; মুসলিম: ৬৪০)
হাদিস ব্যাখ্যাকাররা বলেন, এই হাদিসে জামাতে নামাজের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ২৭ গুণের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু কারো ইখলাস বেশি হলে আল্লাহ তাআলা সওয়াব আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া জামাতে নামাজ পড়া ওয়াজিব। বিনা ওজরে জামাত ছেড়ে দেওয়া বড় গুনাহ। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও জাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো (সুরা বাকারা: ৪৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মসজিদে হেঁটে যাওয়ার সওয়াব
তাই জামাতে নামাজ না পড়ে গুনাহগার হওয়া এবং অসীম সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া একজন মুমিনের জন্য কখনও শোভনীয় নয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কী মর্যাদা আছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, তাহলে তা পাওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনবোধে লটারি করত। দুপুরের নামাজের যে মর্যাদা আছে তা যদি তারা জানতে পারত, তাহলে তারা এটা লাভ করার জন্য প্রতিযোগিতায় লেগে যেত। ইশা ও ফজরের নামাজের মধ্যে যে (তাদের জন্য) কী মর্যাদা রয়েছে, তা যদি জানতে পারত, তাহলে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও এসে নামাজে উপস্থিত হতো।’ (মুসলিম: ৮৬৭)
পবিত্র কোরআনের আয়াত থেকে জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং (হে নবী,) আপনি যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন ও তাদের নামাজ পড়ান, তখন (শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলার সময় তার নিয়ম এই যে) মুসলিমদের একটি দল আপনার সঙ্গে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র সঙ্গে রাখবে। অতঃপর তারা যখন সেজদা করে নেবে, তখন তারা তোমাদের পেছনে চলে যাবে এবং অন্য দল, যারা এখনো নামাজ পড়েনি, সামনে এসে যাবে এবং তারা আপনার সঙ্গে নামাজ পড়বে। তারাও নিজেদের আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র সঙ্গে রাখবে।’ (সুরা নিসা: ১০২)
চিন্তা করুন, যুদ্ধের মতো কঠিন পরস্থিতিতেও আল্লাহ তাআলা জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। মহানবী (স.) জামাতে নামাজ আদায়ে গাফিলতির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত হবে না।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৯৩)
বিজ্ঞাপন
এমনকি বিনা কারণে জামাত ত্যাগকারীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার কথাও এসেছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম করে বলছি! অবশ্যই আমি সংকল্প করেছি, আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেব, তারপর আমি নামাজের হুকুম দেব এবং এজন্য আজান দেওয়া হবে, তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করব সে লোকদের নামাজ পড়াবে। এরপর আমি ওই লোকদের দিকে যাব, যারা জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘর তাদের সামনেই জ্বালিয়ে দেব।’ (সহিহ বুখারি: ২৪২০)
আরও পড়ুন: ১১ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন
অতএব কোরআন-সুন্নাহর বিশদ আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি এবং অপারগতা ছাড়া জামাত ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে, বিশেষ অপরাগতার কারণে জামাত ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। কেননা ইসলাম সহজাত, জীবনঘনিষ্ঠ ও স্বভাবজাত ধর্ম। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা, রাস্তায় বেশি কাদা ও অতি অন্ধকার থাকলে, অন্ধ ব্যক্তি, শত্রুর ভয়, বন্দি ব্যক্তি প্রমুখের জন্য জামাতে নামাজ না পড়ার অনুমতি আছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শরিয়তসম্মত ওজর ছাড়া জামাতে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।