images

ইসলাম

নামাজের উত্তম সময়

ধর্ম ডেস্ক

১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৭:২৪ পিএম

নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। একে দীনের খুঁটি বলা হয়। ঈমান আনার পর একজন মুমিনের বড় দায়িত্বটি হলো নামাজ পড়া। এটি আবশ্যক। ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, সময়মতো নামাজ পড়তেই হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘...নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ অমান্য করলে কঠিন গুনাহ হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্ধারিত সময়সীমা আছে। ওই সময়সীমার মধ্যে কোন ওয়াক্ত কোন সময়ে পড়া উত্তম তা নিচে আলোচনা করা হলো।

ফজরের উত্তম সময়
সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফজর নামাজের সময় শুরু হয়। আর তা পড়তে হয় সূর্য ওঠার আগে। সুবহে সাদিক হলো- শেষ রাতে পূর্ব আকাশে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখার আভাস দেখা যায়। তা দেখা যাওয়ার পর থেকে সূর্য ওঠার বেশ কয়েক মিনিট (২০-২২) আগে ফজরের নামাজ পড়া শেষ করতে হয়।

ফজরের নামাজ আলো-আধারিতে আদায় করাই ছিল নবীজির (স.) নিয়মিত অভ্যাস। আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ফজরের সালাত আদায় করতেন। অতঃপর মহিলারা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরে ফিরতেন। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না।’ (সহিহ বুখারি: ৮৬৭; সহিহ মুসলিম: ৬৪৫; মেশকাত: ৫৯৮)
এ কারণেই ফজরের নামাজ ভোরের আলো-আধারিতে আদায় করাই উত্তম।

জোহর ও জুমার উত্তম সময়
শীতকালে যত তাড়াতাড়ি জোহরের নামাজ পড়া যায় তত ভালো। গরমের দিন এক মিছিলের (ছায়ার একগুণ পরিমাণ) শেষ চতুর্থাংশে পড়া ভালো। তবে জুমার নামাজ সব মৌসুমে প্রথম ওয়াক্তে পড়া উত্তম। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪২৯)

আরও পড়ুন: নামাজ জামাতে পড়ার তাগিদ কেন?

আছরের উত্তম সময়
জোহরের সময় শেষ হলেই আছরের সময় শুরু হয়। অধিকাংশ ইমামের মতে কোনো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার পর আছর নামাজের সময় শুরু হয়। সুতরাং ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরপর আছর নামাজ পড়া উত্তম। সূর্য হলদে হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সূর্য যখন হলদে রং হয় এবং শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে এসে যায় তখন মুনাফেকরা আছরের নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, মেশকাত, পৃ-৬০) সুতরাং সূর্যের আভা হলদে রং হয়ে আসার আগেই আছর পড়া উচিত। 

মাগরিবের উত্তম সময়
সূর্যাস্তের পর দেরি না করে মাগরিবের নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। সূর্য ডোবার পর থেকে পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময় (মুসলিম, মেশকাত: ৫৯)। রাফে ইবনে খুদাইজ বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে নামাজ পড়তাম। তারপর আমাদের কেউ গিয়ে তীর ছুঁড়লে আমরা তার সেই তীর পড়ার জায়গাটা দেখতে পেতাম। (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত, পৃ-৬০)

আরও পড়ুন: মুনাফিকের কাছে ভারী দুই নামাজ 

এশার উত্তম সময়
পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর হওয়ার পর আকাশ প্রান্তে যে সাদা আভা চোখে পড়ে তা মুছে যাওয়ার পরই মূলত এশার সময় শুরু হয়। ওই সময় থেকে শুরু করে রাতের তিন ভাগের এক ভাগের মধ্যে এশার নামাজ পড়া মোস্তাহাব। তিনভাগ অতিক্রান্ত হবার পর থেকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত পড়াও জায়েজ। আর অর্ধেক রাত থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত পড়া মাকরুহের সাথে জায়েজ। অর্থাৎ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। বিলম্ব করার কারণে মাকরুহ হবে। (হেদায়া: ১/৫০-৫১, শরহে নুকায়া: ১/৫৩-৫৫, তামহিদ: ৮/৯২)

মূলত নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সাধারণত এ কারণেই জামাআতে নামাজ আদায় করা হয় ওয়াক্তের শুরুর সময়ে। শরিয়তসম্মত ওজরে যারা জামাতে শরিক হতে পারেন না, তাদের উচিত আউয়াল ওয়াক্তে বা ওয়াক্তের শুরুর সময়ে নামাজ পড়ার প্রতি যত্নবান হওয়া।

আরও পড়ুন: স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার নিয়মটি কেমন?

উল্লেখ্য- সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দুপুরে এবং সূর্যাস্তের সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। উকবা ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের নির্ধারিত তিন সময়ে নামাজ আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। (তাহলো)- ১. সূর্যোদয়ের সময়; যতক্ষণ না সূর্য উপরে উঠবে (সূর্যোদয়ের আগে-পরে প্রায় ২০-২২মিনিট)। ২. দ্বিপ্রহরে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সময় যতক্ষণ না ঢলে পড়ে এবং ৩. সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়; যতক্ষণ না অস্ত যাবে (সূর্যাস্তের আগে-পরে প্রায় ২০-২২মিনিট)।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নির্ধারিত সময়ে ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।