images

ইসলাম

কথিত আলেমের কাছে গিয়ে ঈমানহারা হচ্ছেন না তো?

ধর্ম ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:০০ পিএম

images

ইসলামের যেকোনো বিষয়ে ইলম বা জ্ঞান ছাড়া যারা আত্মমুগ্ধতায় ভোগেন, সত্যপন্থী আলেমদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হন এবং কোরআন-সুন্নাহর ব্যাপারে নানা মন্তব্য করেন, তারা নিতান্তই মুর্খ। সত্য থেকে অনেক দূরে। তাদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—‘তাদের মধ্যে এমন কতক নিরক্ষর লোক আছে, যাদের মিথ্যা আশা ছাড়া কিতাব সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু অমূলক ধারণা পোষণ করে।’ (সুরা বাকারা: ৭৮)

এই আয়াতে সেসব লোকের কথা বলা হয়েছে, যারা মনে করেন—শুধু তারা নিজেরাই জান্নাতের উপযুক্ত। যেমন বলা হয়েছে, ‘আর তারা বলে, ইহুদি অথবা নাসারা ছাড়া অন্য কেউ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এটা তাদের মিথ্যা আশা।’ (সুরা বাকারা: ১১১)

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই অনুমানের উপরই সন্তুষ্টির ঢেকুর তুলছে অধিকাংশ মানুষ। তারা কোরআন সুন্নাহর গভীর ইলম ছাড়া তর্ক-বিতর্ক করছে আর মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। দলে দলে মানুষ ঢুকছে তাদের কাতারেই। অথচ সেসব লোকের বক্তব্য গ্রহণ করতে নিষেধ করে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আপনি যদি জমিনের অধিকাংশ লোকের কথামতো চলেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে। (সুরা আনআম: ১১৬)

আরও পড়ুন: গুনাহ মাফ ছাড়াও ইস্তেগফারের ৬ বিস্ময়কর উপকার

তাই কোরআন-সুন্নাহর ধারকরা ছাড়া অন্য কাউকে ইসলামি জ্ঞান বিলাতে দেখলে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। সেটা করতে হবে ঈমানের তাগিদে। তাদেরকে তো তাদের সত্য-বিরোধিতাই জাহান্নামে নিয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে এবং সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে তার চেয়ে বেশি অবিচারকারী কে আছে? অবিশ্বাসীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?’ (সুরা ঝুমার: ৩২)

পবিত্র কোরআন একাধিক জায়গায় এ বিষয়টি নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং বিশেষ করে ঈমান সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়ে সতর্ক হতে হবে মুসলিম উম্মাহকে। অনুসরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যোগ্য আলেমদেরই অনুসরণ করতে হবে।

আর মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো—তারা অনুমান, নিজের ধ্যান-ধারণার ওপর নির্ভর না করে যা প্রমাণিত সত্য তা নিঃশর্তভাবে মেনে নেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সত্য এনেছে এবং যারা সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে তারাই তো আল্লাহভীরু।’ (সুরা ঝুমার: ৩৩)

আরও পড়ুন: পুরুষের মতো হতে চাওয়া নারীত্বের অপমান: শায়খ আহমাদুল্লাহ

অপরদিকে, যারা নিজের অনুমানের ওপর ভিত্তি করে শরিয়তের সুস্পষ্ট বিষয় অস্বীকার করে এবং সত্যপন্থী আলেমদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয় তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো, ‘যখন তাদের কাছে কোনো নিদর্শন আসে, তারা তখন বলে, আল্লাহর রাসুলদের যা দেওয়া হয়েছিল তা আমাদের না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কখনো বিশ্বাস করব না। আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন, তা তিনিই ভালো জানেন। যারা অপরাধ করেছে, চক্রান্তের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি তাদের ওপর আপতিত হবেই।’ (সুরা আনআম: ১২৪)

হক্কানি আলেম চেনার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো—কোরআন-হাদিসের বিশুদ্ধ শিক্ষাঅর্জন ছাড়াও তাঁদের চেহারা-পোশাকে সুন্নতের ছাপ, কথায়-আচরণে পরহেজগারিতা থাকবে। বেদআতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সুন্নতের প্রতি সদা আগ্রহী থাকবেন এবং সমাজে বিভ্রান্তি বা ফেতনা সৃষ্টি করবেন না। তাঁরাই মূলত হক্কানি আলেম।

হাদিসের ভাষ্যমতে, সেসব লোকের বৈশিষ্ট্য হলো—তাঁরা রাসুলুল্লাহ (স.) এবং তাঁর সাহাবীগণের পথে থাকবেন। (তিরমিজি: ২৬৪১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি কোরআন-হাদিস অধ্যয়নের তাওফিক দান করুন। শরিয়তের নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করতে হক্কানি আলেমদের চেনার, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে সঠিক সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।