ধর্ম ডেস্ক
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:১৬ পিএম
তাহাজ্জুদ নামাজ নেককার বান্দার বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চমৎকার উপায়। এই উপায়টি কোরআন-সুন্নাহ থেকেই প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে। এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৭৯)। শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন প্রভুর ভালোবাসায় যারা নামাজে দাঁড়ায়, তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে’ (সুরা সাজদা: ১৬)
রাতে ঘুম থেকে ওঠে অজু করা, নামাজ পড়া—এটি সবার পক্ষে সহজ নয়। যারা মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টায় থাকেন, তারাই এই নামাজ পড়ার যোগ্যতা লাভ করেন। মনের কুপ্রবৃত্তি দমনে এই নামাজ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির) একেবারে যথার্থ। (সুরা মুজ্জাম্মিল: ০৬)
আরও পড়ুন: মাগরিবের জামাতের আগে নফল পড়ার গুরুত্ব কতটুকু?
আল্লাহ তাআলা চান- বান্দা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য অতিরিক্ত কিছু করুক। ফরজ, ওয়াজিব আদায়ের পর যে নামাজ পড়া হয় তা নফল হলেও এটি মহান প্রভুর প্রতি বেশি ভয় ও ভালোবাসার প্রমাণ। সেজন্যই নবীজি (স.) উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন, তাহাজ্জুদ পড়তে না পারলে অন্তত দু’রাকাত নামাজ পড়ে ঘুমাতে। তাতেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তাহাজ্জুদের সওয়াব দিতে পারেন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতির পড়বে তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে।’ (সুনানে দারেমি: ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১০৬; তাহাবি: ২০১১)
মুমিনের উচিত, তাহাজ্জুদ পড়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। কিন্তু কেউ যদি রাতের শেষ ভাগে ওঠার ব্যাপারে পরিপূর্ণ নিশ্চিত না হয়, তবে শোয়ার আগে এই দুরাকাত নামাজ যেন মিস না হয়। তাদের জন্য হাদিস অনুযায়ী, এটিই হতে পারে তাহাজ্জুদের ফজিলত অর্জনের বিকল্প পদ্ধতি, যদিও তা রাতের শেষ ভাগে বিছানা ত্যাগ করে নামাজ পড়ার সমতুল্য অবশ্যই হবে না। তবে তাহাজ্জুদের সওয়াব পাওয়ার আশা তো করা যাবে।
আরও পড়ুন: তাহিয়্যাতুল অজুর পুরস্কার
আমরা জানি, তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় শেষ প্রহরে, কিন্তু ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। কেননা তাহাজ্জুদের মূল সময়টি শুরু হয় ইশার নামাজের পর থেকে। আমরা অনেকেই শেষ রাতে উঠতে না পারার কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (স.) স্বীয় উম্মতের এই দুর্বলতার প্রতি সদয় হয়ে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে ‘তোমরা ইশার নামাজের পর শোয়ার আগে তাহাজ্জুদের নিয়তে অন্তত দু’রাকাত নামাজ পড়ে নেবে।’
এছাড়াও অনেকে জানেন না- ইশার পর চার রাকাত নফল নামাজ খুব ফজিলতপূর্ণ আমল। এই চার রাকাত নফলের বিশেষ ফজিলত বর্ণনায় কাব (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করে ইশার জামাতে অংশগ্রহণ করবে, অতঃপর ইশার নামাজের পর চার রাকাত (নফল) নামাজ পড়বে, যাতে কিরাত-রুকু-সেজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, তার জন্য শবেকদরের মতো সওয়াব লেখা হবে।’ (নাসায়ি: ৪৯৫৫)
আরও পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজ নেককার ও উত্তম বান্দার বৈশিষ্ট্য
ইবনে আব্বাস (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (স.)-এর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার উদ্দেশে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে রাতে মেহমান হয়েছিলেন, সেই রাতে তিনি নবীজির শোয়ার আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়ার আমলও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। (বুখারি: ১১৭)
অতএব, আমরা যারা চেষ্টা করেও রাতের শেষ ভাগে ওঠতে পারি না, তাদের উচিত কমপক্ষে ইশার সুন্নতের সঙ্গে উল্লিখিত নফল নামাজগুলো পড়ে নেওয়া। ইনশাআল্লাহ এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ আমাদের তাহাজ্জুদের ফজিলত দান করবেন। তবে রাতের শেষভাগে বিছানা ত্যাগ করার মন-মানসিকতা, অভ্যাস করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।