মাগরিবের আজান ও ইকামতের মাঝে দু’রাকাত নফল নামাজ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, ওই সময়ে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত নেই। অপর মতটি হলো- ওই সময় নামাজ পড়া জায়েজ। খেয়াল করলে দেখবেন, বিষয়টিতে আসলে কোনো মতপার্থক্য নেই। তবে, কেউ যদি ওই নামাজকে মোস্তাহাব বলে থাকেন, তাহলে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে আলোচনা প্রয়োজন।
প্রথম মত: প্রত্যেক আজানের পরেই দুই রাকাত নফল পড়ার সময় থাকা উচিত। মাগরিবের পরেও সেই সময়টি থাকবে এবং কেউ চাইলে দুরাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন। কারণ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আজান ও ইকামতের মাঝে নামাজ রয়েছে। প্রত্যেক আজান ও ইকামতের মাঝে নামাজ রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেন, ‘যে ব্যক্তি চায়’ (সহিহ বুখারি: ৬২৭)। দ্বিতীয় পক্ষের মতে, হাদিসটি জায়েজ হওয়ার দলিল, মোস্তাহাব হওয়ার নয়।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় মত: মাগরিবের আজান ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজের বিশেষ ফজিলত নেই, তাই পড়াটা জরুরি নয়। বরং, মাগরিবের আজানের পরে বিলম্ব না করে দ্রুত মাগরিব পড়ার কথা হাদিসে এসেছে। এছাড়াও, রাসুলুল্লাহ (স.) মাগরিবের আজান ও ইকামতের মাঝে কোনো নামাজ পড়েছেন- এরকম স্পষ্ট কোনো সহিহ বর্ণনা নেই। সহিহ বর্ণনা অনুযায়ী, খোলাফায়ে রাশেদিন এ সময় কোনো নামাজ পড়তেন না। অন্যান্য সাহাবাদের কাছেও সাধারণত এ সময় নামাজ পড়ার বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-কে মাগরিবের ফরজের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-এর যুগে কাউকে উক্ত নামাজ পড়তে দেখিনি। (সুনানে আবু দাউদ: ১২৮৭)
হাম্মাদ বিন আবি সুলাইমান (রহ.) বলেন- আমি ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.)-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামাজ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ (স.), আবু বকর, উমর (রা.) এই নামাজ পড়তেন না। (কিতাবুল আছার: ১/১৬৩)
সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, আমার মতও ইবরাহীম নাখায়ির মতই। (সুনানে বায়হাকি: ২/৪৭৬)
এছাড়াও হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাজহাবের ফকিহগণ উক্ত দুই রাকাত নফল নামাজকে সুন্নত বা মোস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি। হানাফি মাজহাবের পূর্ববর্তী ফকিহগণের মতে এ সময় নামাজ পড়া মাকরূহে তানযিহী তথা অনুত্তম। মালেকি মাজহাবের ফকিহগণও এ সময় নামাজ পড়াকে মাকরূহ বলেছেন। হাম্বলি মাজহাবের কোনো কোনো ফকিহ থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে। তবে, শাফেয়ি মাজহাবে এই নামাজ নিয়ে দুটি মত রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী, এ সময় দু’রাকাত নফল পড়া মোস্তাহাব। অপর মত অনুযায়ী জায়েজ।
বিজ্ঞাপন
উভয় মতের আরও কিছু দলিল
সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেন- ‘আমি সাদ ইবনে আবি ওয়াককাস (রা.) ছাড়া আর কোনো ফকিহকে মাগরিবের আগে নামাজ পড়তে দেখিনি।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৭৪৬৪)
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ)-এর আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘মুহাজির সাহাবিগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন না, আর আনসার সাহাবিগণ তা পড়তেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৩৯৮৪)
মনে রাখতে হবে, এটি একটি শাখাগত মাসআলা। তাই এতে ভিন্ন মত রয়েছে। কেননা, সাহাবা এবং তাবেয়িদের কেউ কেউ এ সময় নফল পড়তেন। তাই কাউকে এ সময় নামাজ পড়তে দেখলে আপত্তি করা ঠিক নয়। বরং তার নামাজে ব্যাঘাত যেন না ঘটে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা সকলের কর্তব্য।
তথ্যসূত্র: আলমাবসুত, সারাখসি: ১/১৫৭, ১৭৫; তুহফাতুল মুলূক পৃষ্ঠা-৫৯; আলইখতিয়ার: ১/৪১; তাবয়িনুল হাকায়েক: ১/৮৭; আশশারহুল কাবির, দরদের: ১/১৮৭; হাশিয়াতুশ শিলবি: ১/১৮১; হাশিয়াতুস সাবি আলাশ শারহিস সাগির: ১/৯০; আল-ইনসাফ, মারদাবি: ১/৪২২; ইলাউস সুনান: ২/৬৮
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক সুন্নাহ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।