ধর্ম ডেস্ক
২৩ আগস্ট ২০২২, ০৩:১৪ পিএম
একে অপরকে ভালবাসা আল্লাহর বড় নেয়ামত। আল্লাহর জন্য কেউ কাউকে ভালোবাসলে আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসেন। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, ‘এক ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য ঘর থেকে রওনা হলো। পথিমধ্যে আল্লাহ তাআলা এক ফেরেশতাকে মানুষের বেশে পাঠালেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে উত্তর দিল, এ গ্রামে আমার এক ভাই থাকেন। তাকে দেখতে যাচ্ছি। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তোমার প্রতি কি তার কোনো অনুগ্রহ রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার জন্য যাচ্ছ? সে বলল, না। আমি যাচ্ছি এজন্য যে, আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। ফেরেশতা বললেন, তা হলে শোনো, আমি তোমার কাছে আল্লাহর দূত হিসেবে এসেছি এ কথা জানানোর জন্য যে, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসো!’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৭)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মহাসম্মানিত পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, ‘আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য (পরকালে) থাকবে নুরের মিম্বার, যা দেখে নবী ও শহীদরা ঈর্ষা করবেন।’ (তিরমিজি: ২৩৯০)
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নবীজির প্রতি ভালোবাসার কারণে কেউ যদি মুসলিম ভাইয়ের পেছনে ধন-সম্পদ ব্যয় করে, হাদিসের ভাষ্যমতে তাকে ভালোবাসা নবীজির (স.) জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত- ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার রেজামন্দির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টি কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালোবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২০৮৩)
আরও পড়ুন: আল্লাহর কাছে বান্দার দুই ফোঁটা অশ্রুর মূল্য
স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার প্রতিও খুব গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। রাসুল (স.) তাঁর স্ত্রীদের ভালোবাসতেন। তাঁদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তাঁদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। তাঁদের নিয়ে আনন্দ-ফূর্তি করতেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) হজরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। আয়েশাকে নিয়ে তিনি আবিসিনীয়দের খেলা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন, যার চরিত্র সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (রিয়াজুস সালিহিন: ১/১৯৭)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি কোনো স্বামী স্ত্রীর দিকে দয়া ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায় তা হলে আল্লাহ তাআলা তার দিকে দয়া ও রহমতের দৃষ্টি নিয়ে তাকান।’ এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, তাদের প্রতি রহম করা ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেক স্ত্রীই তার স্বামীর কাছে ভালোবাসা চায়। স্বামীদের উচিত, স্ত্রীদের ভালোবাসা ও তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ঈমানের পূর্ণতার লক্ষণ। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে আল্লাহর জন্য দান করল কিংবা আল্লাহর জন্য দান করা থেকে বিরত রইল এবং আল্লাহর জন্য কারও সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করল কিংবা আল্লাহর জন্য কারও সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিয়ে করল, তবে তার ঈমান পূর্ণতা লাভ করল।’ (তিরমিজি: ২৫২১)
আরও পড়ুন: মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করার সওয়াব
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘আল্লাহ তাআলার বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নন, আর শহীদও নন। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদরা তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন, তারা হচ্ছে সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোনো রক্তের সম্পর্ক, নেই কোনো বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমণ্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নূরের মিম্বরের ওপর অবস্থান করবে। কেয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে, তখন তারা ভীত হবে না। আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখন তাদের কোনো দুঃখ থাকবে না। (তিরমিজি: ২৩৯০)
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, এমন তিনটি বস্তু রয়েছে, যে ব্যক্তির মধ্যে সেগুলো বিদ্যমান থাকবে, কেবল সে-ই এগুলোর কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। তা হলো- ১) যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা সব কিছু হতে অধিক পরিমাণে রয়েছে। ২) যে ব্যক্তি কোনো বান্দাকে শুধু আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে ভালোবাসে এবং ৩) যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা কুফর হতে মুক্তি দেওয়ার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে অনুরূপভাবে অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। (বুখারি: ১৬)
কেউ কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসে তার সাহায্যে এগিয়ে এলে আল্লাহ তার জন্য অনুরূপ সাহায্য নিয়ে হাজির হন। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার কোনো একটি কঠিন বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত মানুষের অভাব সহজ করে দেবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাব সহজ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ততক্ষণ পর্যন্ত সহযোগিতা করেন, যতক্ষণ সে তার অন্য ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯)
অন্তরে কারো প্রতি আল্লাহর জন্য ভালোবাসা লালন করাও অনেক মর্যাদাপূর্ণ আমল। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, তা লুকিয়ে রাখে, নিজেকে পবিত্র রাখে এবং এই অবস্থায় মারা যায়— সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে।’ (কানজুল উম্মাল: ৩০/৭৪)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, ‘আমার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পরস্পরকে যারা ভালোবেসেছিল তারা কোথায়? আজ আমি তাদের ছায়া দেব আমার ছায়াতলে, যেদিন কোনো ছায়া নেই আমার ছায়া ছাড়া।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। আমিন।