images

ইসলাম

শ্রমিক-ঠকানো মালিকের প্রতিপক্ষ হবেন স্বয়ং আল্লাহ

ধর্ম ডেস্ক

২১ আগস্ট ২০২২, ০৬:১১ পিএম

ইসলামে শ্রমিকের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকের। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, অধীনস্থের জন্যে খাওয়া-দাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা মনিবের দায়িত্ব। তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। (সহিহ মুসলিম: ১৬৬২, ইফা: ৪১৭০)

শ্রমিক ঠকানো ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম পাপ। ইসলামের নির্দেশনা হলো—শ্রমিক তার প্রাপ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হলেও মালিক তাকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে। যেমন—শোআইব (আ.) মুসা (আ.)-কে ডেকে এনে পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তখন নারীদ্বয়ের একজন সলজ্জ পায়ে তার কাছে এলো এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর বিনিময় প্রদানের জন্য।’ (সুরা কাসাস: ২৫)

অথচ বর্তমানে অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হয়। মহানবী (স.) এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোরজবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সেই জাতি কখনো পবিত্র হতে পারে না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৪২৬)

আরও পড়ুন: ইসলামে বন্ধুত্বের বিশেষ মূল্যায়ন ও ফজিলত

বেতন ও পারিশ্রমিক কর্মজীবীর এমন অধিকার, যা দ্রুততম সময়ে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৪৪৩০)

ঠুনকো অজুহাতে বেতন-ভাতা ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আরো ভয়ঙ্কর অপরাধ। মহানবী (স.) বলেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিপক্ষে থাকব। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, যে কোনো আজাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর একজন সে, যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পর কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তার প্রাপ্য দেয়নি।’ (সহিহ বুখারি: ২২২৭)

অন্য হাদিসে পারিশ্রমিক ও প্রাপ্য অধিকার নিয়ে টালবাহানাকে জুলুম আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহানবী (স.) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির টালবাহানা অবিচার। (সহিহ বুখারি: ২২৮৭); অর্থাৎ সামর্থ্য থাকার পরও মানুষের প্রাপ্য ও অধিকার প্রদানে টালবাহানা করা মহাপাপ।

আরও পড়ুন: ইসলামে মায়ের মর্যাদা ও অধিকার

ইসলাম সাধারণভাবেই অভাবগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আর অসহায় ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যদি হয় নিজের শ্রমিক—তবে এই দায়িত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) মালিকপক্ষকে শ্রমিকের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে যা খায়, তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা থেকে যেন পরিধান করায়।’ (সহিহ বুখারি: ২৫৪৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল মালিককে শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহর বিপক্ষে গিয়ে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচতে দুনিয়াতে সাবধানতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।