ধর্ম ডেস্ক
০২ আগস্ট ২০২২, ০১:১৫ পিএম
মহররম মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরার দিন। এই দিনের সুমহান মর্যাদা ও তাৎপর্যকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে কিছু নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড ও কুসংস্কারের প্রচলন হয়েছে। কিছু মানুষ মহররম আসার সঙ্গে সঙ্গে হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের স্মরণ করে মাতম-বিলাপ শুরু করেন এবং নিজ দেহে চাবুকের আঘাত ও ছুরিকাঘাত করেন। এটি গর্হিত আমল। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শোকে বিহ্বল হয়ে যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, কাপড় ছেঁড়ে ও জাহেলি যুগের মতো আচরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি: ১২৯৭)
এই দিনকে কেন্দ্র করে আরো অনেক বিদআতমূলক কাজেরও প্রচলন হয়েছে। যেমন- কালো পতাকা উত্তোলন, রাত জাগা, দুলদুল কবর ইত্যাদির আকৃতি বানানো, সাজসজ্জা ও আরাম-আয়েশ ত্যাগ করা, মর্সিয়া করা, পুঁথি পাঠ করা, হালুয়া-রুটির হৈ-হুল্লোড় করা, শোকযাত্রা বের করা, আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করা।
এসবের মধ্যে এমন কাজও রয়েছে, যেগুলোতে শিরকের আশঙ্কা থাকে। অতএব এসব কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। কেউ কেউ আশুরাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য কল্পিত ঘটনা ও বিশেষ বিশেষ পন্থায় ইবাদতের উপদেশ দিয়ে থাকেন—যা কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং তা-ও নিন্দনীয় ও বর্জনীয়।
আরও পড়ুন: আশুরার দিনে যেসব আমল করবেন
প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) বলেন, ‘হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের দিনটিকে যদি মাতম বা শোক দিবসের জন্য এতই গুরুত্ব দেওয়া হতো, তবে সোমবার দিনটিকে আরো ঘটা করে শোক দিবস হিসেবে পালন করা বেশি বাঞ্ছনীয় ছিল। কারণ, এ দিন মহানবী মুহাম্মদ (স.) ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনেই নবীর পর শ্রেষ্ঠ মানব প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।’ (গুনিয়াতুত তালেবিন: ২/৩৮)
আল্লামা রুমি (রহ.) বলেন, ‘হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শাহাদাতের কারণে রাফেজিদের মতো এ দিনটিকে মাতমের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়া, বস্তুত দুনিয়ায় নিজেদের পুণ্যময় সব কাজ বিনাশ করার নামান্তর।’ (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ২/৩৪১-৩৪২)
হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র কোরআনকে সাজিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা এবং তা মাথায় চড়িয়ে অলিগলিতে প্রদর্শন করা, তার নিচে গিয়ে মাথা লাগানো, চুমো খাওয়া, ঢাকঢোল পেটানো একেবারেই ভিত্তিহীন কাজ। এর দ্বারা সওয়াবের আশা করা একেবারেই বৃথা।’ (ইমদাদুল ফাতোয়ায়ে: ৫/৩৪৮)
পড়ুন: আশুরার রোজা যেভাবে রাখবেন
মারেফুল কোরআন রচয়িতা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) বলেন, ‘কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা মুসলমানের অন্তরকে সব সময় ব্যথিত করে। শুধু ১০ মহররমকে শোকের জন্য বেছে নেওয়া বোকামি বৈ কিছুই নয়।’ (ইমদাদুল মুফতিয়িন: ১/৯৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নাহকে গুরুত্ব দেওয়ার, সত্য বলার, সত্য উপলব্ধি করার ও সত্যের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।