ধর্ম ডেস্ক
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম
জান্নাত লাভের জন্য কেবল বাহ্যিক ইবাদত-বন্দেগিই শেষ কথা নয়; বরং অন্তরের পবিত্রতা এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত মানসিকতা মানুষকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবদ্দশাতেই তিনি জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছিলেন। কিন্তু এর পেছনের গোপন রহস্য কী? হাদিসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় তা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
একদিন মসজিদে নববিতে সাহাবিদের সঙ্গে বসে হঠাৎ রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘এখন তোমাদের সামনে এমন এক ব্যক্তি আসবে, যে জান্নাতি।’ কিছুক্ষণ পর হজরত সাদ (রা.) প্রবেশ করলেন। তাঁর দাড়ি বেয়ে অজুর পানি টপকে পড়ছিল এবং বাম হাতে জুতা ধরা ছিল। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই ঘটনা পরপর তিন দিন ঘটল এবং প্রতিবারই সেই একই সাহাবি, হজরত সাদ (রা.) প্রবেশ করলেন। (সূত্র: মুসনাদে আহমাদ: ১২৬৯৭; শুআবুল ঈমান: ৬৬০৫)
সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) জানতে চাইলেন, হজরত সাদ (রা.) কীভাবে এই বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তিনি কৌশল করে তিন দিন তিন রাত হজরত সাদের বাড়িতে মেহমান হিসেবে থাকলেন এবং তাঁর ইবাদত পর্যবেক্ষণ করলেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন, হজরত সাদ (রা.) ফরজ ইবাদতের বাইরে রাতজাগা বা অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়তেন না। তবে তিনি যখন ঘুমাতেন, বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন তখন আল্লাহর জিকির করতেন। অবশ্য তাঁর মুখ থেকে ভালো কথা ছাড়া কোনো মন্দ কথা শুনিনি।
আরও পড়ুন: নবীজির যে মোজেজা দেখে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ঈমান এনেছিলেন
বিদায়ের সময় আব্দুল্লাহ (রা.) সরাসরি জানতে চাইলেন, কোন আমল হজরত সাদ (রা.)-কে এই মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। জবাবে হজরত সাদ (রা.) বললেন- ‘আমার যেটি তুমি দেখেছ, সেটিই প্রধান আমল। তবে একটি বিশেষ বিষয় হলো- আমি অন্তরে কোনো মুসলিমের প্রতি বিদ্বেষ বা গোপন শত্রুতা রাখি না। আর আল্লাহ কাউকে যে নেয়ামত দিয়েছেন, তা দেখে আমি কখনো হিংসা করি না।’ এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ (রা.) বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘এ গুণটিই আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছে। আর সেটাই আমরা করতে পারি না। (মুসনাদে বাজজার: ১৯১৮; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৮/৭৪; আততারগিব ওয়াত তারহিব: ৫/১৭৮)
হজরত সাদ (রা.)-এর উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর কাছে অন্তরের স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা অনেক বেশি মূল্যবান। তাই জান্নাতি হওয়ার জন্য আমাদের উচিত:
১. অন্তরে কোনো মুসলিমের প্রতি বিদ্বেষ বা শত্রুতা না রাখা।
২. অন্যের সুখ বা উন্নতি দেখে হিংসা না করা।
৩. সকল মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা করা।
আরও পড়ুন: নবীপ্রেমের অনন্য উদাহরণ জায়েদ বিন হারিসা (রা.)
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
মর্যাদা: তিনি ‘আশারায়ে মুবাশশারা’, অর্থাৎ দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবির একজন।
পরিচয়: মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং সম্পর্কে নবীজি (স.)-এর মামা ছিলেন।
বীরত্ব: বদর, ওহুদসহ বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং কাদিসিয়ার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন।
ইন্তেকাল: ৫৫ হিজরিতে আকিক নামক স্থানে ৮২ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হজরত সাদ (রা.)-এর মতো হিংসামুক্ত ও পবিত্র অন্তরের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।