শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

নবীজির যে মোজেজা দেখে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ঈমান এনেছিলেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

নবীজির যে মোজেজা দেখে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ঈমান এনেছিলেন

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) একজন বিখ্যাত সাহাবি ছিলেন। তিনি প্রথম যুগের অগ্রগণ্য সাহাবিদের একজন। তাঁর বর্ণনামতে, তিনি ষষ্ঠ নম্বরে ইসলাম গ্রহণ করেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩২২৩৩)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সম্পর্ক এতটাই দৃঢ় ছিল যে অনেকে তাঁকে নবীজির পরিবারের সদস্য ভাবতেন। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, আমরা মদিনায় এসে ইবনে মাসউদকে রাসুল (স.)-এর পরিবারের সদস্য মনে করতাম। কেননা রাসুল (স.)-এর কাছে তাঁর ও তাঁর মায়ের অধিক পরিমাণে যাওয়া-আসা ছিল। (তিরমিজি: ৩৮০৬)


বিজ্ঞাপন


বালক বয়সে একদিন তিনি মক্কার মুশরিক সর্দার উকবা ইবন আবি মুআইতের ছাগল চরাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় নবী কারিম (স.) হজরত আবু বকর (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাঁকে একটি অলৌকিক ঘটনা দেখান। তা দেখে হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বুঝতে পারেন সত্যিই তিনি একজন নবী।

সীরত গ্রন্থে ঘটনাটি এসেছে এভাবে— নবী (স.) তাঁকে বললেন, হে বালক! তোমার কাছে দুধ আছে? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, হ্যাঁ আছে, কিন্তু তা যে আমার কাছে আমানত! নবী (স.) বললেন, তোমার এখানে এমন কোনও বকরি আছে, যেটি এখনও গর্ভধারণের বয়সে পৌঁছেনি?

আরও পড়ুন: সাহাবিদের সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেছেন

তিনি সেরকম একটি ছাগল নিয়ে আসলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) সেটির ওলানে হাত বুলালেন। অমনি তা দুধে ভরে গেল। তিনি একটি পাত্রে দুধ দোয়ালেন। তারপর নিজে পান করলেন এবং আবূ বকর (রা.)-কেও পান করালেন। অন্য বর্ণনামতে, তারা তিনজনই দুধ পান করলেন। তারপর ওলানকে লক্ষ্য করে নবীজি বললেন, সংকুচিত হয়ে যাও। অমনি সেটি সংকুচিত হয়ে গেল। এ কাণ্ড দেখে বালক আব্দুল্লাহ অবাক হয়ে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-কে তিনি বললেন, আপনি আমাকে এসব কথা শিখিয়ে দিন। তিনি তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন, তুমি এক প্রশিক্ষিত বালক। (জাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা-২৮৩)


বিজ্ঞাপন


এ অলৌকিক ঘটনাটি বালক আব্দুল্লাহর অন্তরে দারুণ রেখাপাত করে। তারপর তিনি রাসুল (স.)-এর সঙ্গে দেখা করে তাঁর প্রতি ঈমান আনেন। তারপর কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুসলিমগণ যখন হাবশায় হিজরত করেন, তখন তিনিও তাদের সঙ্গে হাবশায় চলে যান। তারপর তিনি মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন।

তিনি বদর যুদ্ধ ও বাই'আতুর রিজওয়ানসহ সকল যুদ্ধাভিযানে অংশগ্রহণ করেন। নবী কারিম (স.) তাঁকে খুবই স্নেহ করতেন। তিনি ছিলেন নবীজির ঘনিষ্ঠতম সাহাবিদের একজন। তিনি চাল-চলন ও আখলাক-চরিত্রে রাসুল (স.)-এর প্রতিচ্ছবি ছিলেন। হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্য থেকে চলাফেরা ও আচার-ব্যবহারে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ। (তিরমিজি: ৩৮০৭)

তাঁর জ্ঞান ছিল অত্যন্ত গভীর। তিনি একজন বিশিষ্ট ফকিহ ছিলেন। জ্ঞানগভীরতা ও বিচক্ষণতার কারণে তাঁর প্রতি নবীজির বিশেষ আস্থা ছিল। সাহাবায়ে কিরামও তাঁর প্রতি সুধারণা পোষণ করতেন। হজরত আলী (রা.) বলেন, যদি আমি কাউকে বিনা পরামর্শে আমির নিযুক্ত করি, তাহলে ইবনে মাসউদকে করব। (তিরমিজি: ৩৮০৮) 

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সুস্পষ্টভাবে সুন্দর তেলাওয়াতের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। নবীজি তাঁর তেলাওয়াত শুনতে চাইতেন। তাঁর তেলাওয়াত শুনে কাঁদতেন। এক হাদিসে এসেছে, একবার নবীজি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা).-কে বললেন, তুমি আমাকে একটু তেলাওয়াত করে শোনাও তো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে তেলাওয়াত শোনাব, আপনার উপরই তো কোরআন নাজিল হয়েছে!

আরও পড়ুন: কোরআনের যেসব আয়াত পড়ে সাহাবিরা কাঁদতেন

নবীজি বললেন, আমার মন চাচ্ছে, কারো থেকে একটু তেলাওয়াত শুনি! এ শুনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূরা নিসা তেলাওয়াত করতে শুরু করলেন। পড়তে পড়তে যখন এ আয়াত পর্যন্ত আসলেন- فَكَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیْدًا (সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? (সুরা নিসা: ৪১) তখন নবীজী বললেন, ঠিক আছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবীজি থামতে বলার পর আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি, তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। (সহিহ বুখারি: ৫০৫৫, ৪৫৮২, ৫০৪৯)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর