images

ইসলাম

কথা বলার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলে ইসলাম

ধর্ম ডেস্ক

২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম

মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র প্রকাশ পায় তার কথাবার্তায়। একজন মুসলমানের কথাবার্তা সংযত, মার্জিত ও সত্যনির্ভর হওয়া জরুরি। মুখে যা আসে তা-ই বলে ফেলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। শিষ্টাচারহীন কথাবার্তা এবং অসংযত আচরণ দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রেই বিপদ ডেকে আনে। মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতিটি কথা রেকর্ড করার ব্যবস্থা রেখেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, (তা সংরক্ষণের জন্য) তার কাছে একজন সদা তৎপর প্রহরী আছে।’ (সুরা কাফ: ১৮) সুতরাং কথাবার্তার সময় একজন মুমিনকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়। ইসলামি শরিয়তের আলোকে কথা বলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদব ও নির্দেশনা হলো-

১. সত্য ও সঠিক কথা বলা

সত্য বলা মুমিনের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তাআলা সর্বদা সত্য কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন- ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’ (সুরা আহজাব: ৭০)

২. স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বলা

কথা বলার সময় অস্পষ্টতা পরিহার করতে হবে। বক্তব্য স্পষ্ট হতে হবে, যেন শ্রোতা সহজে বুঝতে পারে। মুসা (আ.)-এর মুখে জড়তা থাকায় তিনি আল্লাহর কাছে আবেদন করেছিলেন- ‘আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে স্পষ্টভাষী, তাই তাকে আমার সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন; আমি আশঙ্কা করি তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।’ (সুরা কাসাস: ৩৪)

আরও পড়ুন: মানুষ খারাপ হয়ে গেছে, সমাজ ধ্বংস হয়ে গেছে—এমন কথা বললে যে ক্ষতি হয়

৩. শালীনতা বজায় রাখা

মুমিন কখনো অশ্লীলভাষী হতে পারেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন-‘মুমিন ব্যক্তি কখনো ভর্ৎসনা বা অভিসম্পাত করে না এবং অশ্লীল ও অশালীন কথা বলে না।’ (জামে তিরমিজি: ১৯৭৭)

৪. কর্কশ স্বর পরিহার

উচ্চস্বরে বা কর্কশ ভাষায় কথা বলা ইসলাম পছন্দ করে না। এ বিষয়ে লোকমান (আ.)-এর উপদেশ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো; নিশ্চয়ই সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ (সুরা লোকমান: ১৯)

৫. অনর্থক কথা বর্জন

অহেতুক কথা বা সময় অপচয় করার কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। মহানবী (স.) বলেছেন- ‘ব্যক্তির ইসলামি গুণ ও সৌন্দর্য হলো, অহেতুক কথা ও কাজ পরিহার করা।’ (জামে তিরমিজি: ২৩১৮)

আরও পড়ুন: মসজিদে কথা বললে কি ফেরেশতারা অভিশাপ দেন?

৬. ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও মন্দ নামে না ডাকা

কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা খারাপ নামে ডাকা মুসলমানের কাজ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে... আর কোনো নারীও অপর নারীকে যেন উপহাস না করে... তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ।’ (সুরা হুজরাত: ১১)

৭. অজ্ঞদের সঙ্গে তর্ক এড়িয়ে চলা

অজ্ঞদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে সময় নষ্ট না করার শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর দয়াময় আল্লাহর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম।’ (সুরা ফুরকান: ৬৩)

৮. মুরুব্বি ও আলেমদের সম্মান

বড় ও জ্ঞানী ব্যক্তির সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা বেয়াদবি। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেরা পরস্পরের সাথে তেমন করো না। এ আশঙ্কায় যে, তোমাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে।’ (সুরা হুজরাত: ২)

আরও পড়ুন: সাক্ষাতে ৪ সুন্নত: আল্লাহর ভালোবাসা লাভের সহজ উপায়

৯. না জেনে কথা এড়িয়ে চলা

যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে মন্তব্য করা গুনাহ। আল্লাহ বলেন- ‘আর যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৬) ‘যেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে তাদের জিহ্বা, হাত ও পা তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে।’ (সুরা নুর: ২৪)

১০. কথা ও কাজে মিল রাখা

মুমিনের কথা ও কাজে বৈপরীত্য থাকা মুনাফিকি আচরণের শামিল। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বলো, যা তোমরা করো না?’ (সুরা সফ: ২)

কথাবার্তায় সংযম ও সতর্ক থাকা জান্নাতে যাওয়ার পথকে সুগম করে। রাসুলুল্লাহ (স.) জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজতকারীর জন্য জান্নাতের জামিনদার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত ইসলামের এই নির্দেশনা মেনে মার্জিত ও সুন্দর ভাষায় কথা বলা। কথার শুদ্ধতাই মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতায় এগিয়ে নিয়ে যায়।