ধর্ম ডেস্ক
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৩ পিএম
হাশরের মাঠ। যেখানে প্রতিটি মানুষের সমগ্র জীবনের হিসাব এক মুহূর্তে প্রকাশিত হবে। সেদিন ডান হাতে আমলনামা পাওয়া মানেই অনন্ত সুখের সূচনা, আর বাম হাতে পাওয়া মানেই চিরবিরহের যাত্রা। এই চূড়ান্ত মুহূর্তের বর্ণনা কোরআন ও হাদিসে যেভাবে এসেছে, তা এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কেয়ামাত দিবসে আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব-নিকেশের জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৩-১৪)
সেদিন ভালো-মন্দ কোন কাজই গোপন থাকবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমলনামা সামনে রাখা হবে। অপরাধীরা তাতে যা আছে তা দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে এবং বলবে, হায়! এ কী আমলনামা! ছোট-বড় কোনো কিছুই এতে বাদ দেওয়া হয়নি।’ (সুরা কাহাফ: ৪৯)
যাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারা হবে সফলকাম। কোরআনে তাদের আনন্দের মুহূর্তটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে- ‘তখন যাকে আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, এই যে আমার আমালানামা পড়ে দেখ। আমি দৃঢ়বিশ্বাস করতাম যে, আমাকে আমার হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে।’ (সুরা হাক্কাহ: ১৯-২০)
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিন নেতাসহ ডাকা হবে যে কারণে
তাদের জন্য আল্লাহর ওয়াদা- ‘সে থাকবে সম্মানিত জীবনে, উচ্চস্তরের জান্নাতে, যার ফলগুচ্ছ নিম্নমুখী। (বলা হবে) তোমরা যা করেছ তার প্রতিদানস্বরূপ স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে পানাহার করো।’ (সুরা হাক্কাহ: ২১-২৪)
অন্যদিকে, যাদের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে, তাদের অবস্থা হবে করুণ। তারা আফসোস করতে থাকবে- ‘হায়! আমার আমলনামা যদি না দেওয়া হতো! আমি যদি আমার হিসাবই না জানতাম! হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হতো!’ (সুরা হাক্কাহ: ২৫-২৭)
তাদের ভাগ্যে থাকবে কঠোর শাস্তি- ‘তারপর তাকে শিকলবদ্ধ করো, তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো, তারপর তাকে সত্তর হাত দীর্ঘ শেকলে বেঁধে দাও। কারণ, সে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনত না।’ (সুরা হাক্কাহ: ৩০-৩৩)
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিন নবীজি কোথায় অবস্থান করবেন?
রাসুলুল্লাহ (স.) হাশরের মাঠের একটি প্রাণবন্ত দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। ‘এক ব্যক্তিকে ডাকা হবে এবং তার আমলনামা ডান দিক থেকে দেওয়া হবে। তার দেহ হবে ষাট হাত উঁচু, চেহারা উজ্জ্বল, মাথায় থাকবে আলোকিত মুকুট। সে তার পরিবারের দিকে ফিরে যাবে। সবাই বলবে, হে আল্লাহ! আমাদেরকেও এরকম আমলনামা দিন। অন্যদিকে, এক ব্যক্তির আমলনামা বাম দিক থেকে দেওয়া হবে। তার চেহারা হবে কৃষ্ণবর্ণ, মাথায় থাকবে আগুনের টুপি। তার আত্মীয়েরা বলবে, হে আল্লাহ! আমরা এর থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। (মুসনাদে আহমদ: ৮৬৩০)
এই বর্ণনা আমাদের জন্য শুধু ভয়ের নয়, বরং গভীর সচেতনতার বার্তা নিয়ে আসে। আমলনামার পাতায় আজই লিপিবদ্ধ হচ্ছে আমাদের প্রতিটি কাজ- নামাজ, দান, সত্য কথা, এমনকি আমাদের নিয়তও। ডান হাতে আমলনামা পেতে হলে ডান হাত দিয়ে ভালো কাজ গুনতে শুরু করতে হবে আজই।
হাশরের সেই মহাদিনের প্রেক্ষাপটে একজন মুমিনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। প্রতিটি নেয়ামত, প্রতিটি সুযোগ তাঁর দেওয়া আর এর জবাবদিহিতাও তাঁর কাছেই করতে হবে। আমাদের আমলনামা যেন ডান হাতে আসে, তার জন্য আজই শুরু হোক সৎ আমলের যাত্রা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হাশরের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করে জান্নাতের অনন্ত শান্তি দান করুন। আমিন।