পরকালে প্রত্যেক সম্প্রদায়কে নেতাসহ ডাকা হবে। পৃথিবীতে কারো অনুসরণ ও অনুকরণের ফল পরকালেও প্রতিফলিত হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো সেই দিনকে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ ডাকা হবে। যাদের ডান হাতে তাদের আমলনামা দেওয়া হবে, তাদের আমলনামা তারা পাঠ করবে এবং তাদের ওপর সামান্য পরিমাণ অবিচার করা হবে না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭১)
আলোচ্য আয়াতে বলা হচ্ছে, কেয়ামতের দিন মানুষ দলে দলে ইমাম বা নেতাসহ আল্লাহর সামনে হাজির হবে। আয়াতে ‘ইমাম’ বলে কি বোঝানো হয়েছে, এ নিয়ে মুফাসসিরদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে, মুজাহিদ ও কাতাদা বলেছেন, এখানে ইমাম বা নেতা বলে বুঝানো হয়েছে, নবী-রাসূলদের। অর্থাৎ, প্রত্যেক নবীর উম্মতকে তার নবীর নামে ডাকা হবে। যেমন—হে মুসা (আ.)-এর উম্মত, হে ঈসা (আ.)-এর উম্মত, হে ইবরাহিম (আ.)-এর উম্মত, হে মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যে আমল করলে জাহান্নামে যেতে হবে না
হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের বলেছেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এখানে ইমাম বা নেতা বলে বুঝানো হয়েছে ভালো-মন্দ সবধরনের নেতাকে। যারা মানুষকে ভালো পথে দেখায়, অথবা পথভ্রষ্ট করে। কোরআনে নেতা বলে দুই দলকেই বোঝানো হয়েছে।
পরকালে বদকাররা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে দুনিয়ায় তাদের পথভ্রষ্টকারী নেতাসহ। অন্ধ অনুকরণ ও আনুগত্যের কারণে সেদিন তাদের আফসোসের সীমা থাকবে না। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে বিষয়টি বিবৃত হয়েছে। অনুসারীরা অনুগতদের দোষারোপ করবে কেয়ামতের দিন। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের আনুগত্য করতাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।’ (সুরা আহজাব: ৬৭)
অনুসারীরা শুধু দোষারোপ করে থামবে না; বরং নেতাদের দ্বিগুণ শাস্তি দাবি করবে। প্রসঙ্গটি পবিত্র কোরআনে এসেছে এভাবে—‘হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের দাও মহা অভিশাপ।’ (সুরা আহজাব: ৬৮) তখন দুনিয়ার দাম্ভিক নেতারা বলবে- ‘তোমাদের কাছে সত্য পথের দিশা আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বাধা দিয়েছিলাম? বরং তোমরা নিজেরাই ছিলে অপরাধী।’ (সুরা সাবা: ৩২)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব
তাই নেতা নির্বাচন করতে হবে আল্লাহ ও রাসুলের অনুগত ব্যক্তিতে। ইসলামি শরিয়তে আনুগত্য ও অনুসরণের মূল ভিত্তি হলো- আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশের অনুকূল হতে হবে, বিপরীত হবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘পাপ কাজের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের কথা শোনা ও তাঁর আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কাজের আদেশ করা হলে তা শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না।’ (সহিহ বুখারি: ২৯৫৫)
অর্থাৎ মুমিনের জন্য আনুগত্য তখনই বৈধ, যখন ইমাম দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণ করবেন না, বরং দ্বীনের সহযোগী হবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসুলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের’ (সুরা নিসা: ৫৯)।
নেতা যদি সত্যবিচ্যুত হয়, তখন তার মন্দ প্রভাব সমাজের ওপর পড়ে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধশালীদের ভালো কাজের নির্দেশ দিই। কিন্তু তারা সেখানে অসৎকর্ম করে। ফলে তাদের প্রতি দণ্ডাদেশ বৈধ হয়ে যায় এবং আমি তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৬)
আরও পড়ুন: হাশরের দিনের কঠিন তিন মুহূর্ত
যাদের নেতা বা ইমাম সত্যপন্থী কেয়ামতের দিন তারা মুক্তি পাবে। তাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, সে (আনন্দে অন্যদের ডেকে) বলবে—নাও, তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখো। আমি জানতাম যে আমাকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা হবে।’ (সুরা হাককাহ: ১৯-২০)
আর পাপী, অবিশ্বাসী ও হতভাগাদের আমলনামা দেওয়া হবে বাঁ হাতে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যার আমলনামা বাঁ হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে—হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতো, আর আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব। হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার (সব কিছুর) শেষ হতো।’ (সুরা হাককাহ: ২৫-২৭)

