ধর্ম ডেস্ক
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম
আমল ও ইবাদত মানুষের ঈমানের জীবন্ত পরিচায়ক। তবে অনেক সময় দৈনন্দিন জীবন, দুশ্চিন্তা বা আলস্যের কারণে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। নামাজ, কোরআন পাঠ, জিকির বা নেক আমল করার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এমন অবস্থায় অন্তর শিথিল হয় এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা নীরস হয়ে ওঠে। কোরআন ও সুন্নাহতে বিভিন্ন আমলের উল্লেখ আছে, যেগুলো মেনে চললে ঈমানের দুর্বলতা কাটানো সম্ভব। নিম্নে আমরা দশটি কার্যকর আমল তুলে ধরছি, যেগুলো অন্তরকে প্রশান্তি দেবে এবং ঈমানকে দৃঢ় করবে।
এমন লোকদের সঙ্গে থাকুন, যাঁদের সংস্পর্শে আপনার আমল বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ বলেন- ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)
কোরআন পাঠ বা শুনলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। ‘আর যখন তাদের সামনে তাঁর (আল্লাহর) আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় ‘ (সুরা আনফাল: ২)
নবী (স.) ও সাহাবিদের জীবন পাঠ করলে অন্তর প্রশান্ত হয়। আল্লাহ বলেন- ‘মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো।’ (সুরা বাকারা: ১৩)
আরও পড়ুন: মহানবী (স.)-কে যেভাবে অনুসরণ করতেন সাহাবিরা
জিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। ‘যারা ঈমানদার এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)
ইসলামের সৌন্দর্য অনুধাবন করলে হৃদয়ে ঈমানের ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ‘কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এরাই সৎপথ অবলম্বনকারী।’ (সুরা হুজরাত: ৭)
আসমান-জমিন ও প্রাকৃতিক ঘটনায় আল্লাহর মহিমা চিন্তা করুন। এতে মহান রব সম্পর্কে আমার ধারণা সুন্দর হবে। ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৯০)
আরও পড়ুন: সৃষ্টিজগতের রহস্য অনুধাবনে কোরআনের আহ্বান
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা পাবে; আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অন্য সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হবে, ঈমানের জন্য আল্লাহর পথ অনুসরণ করবে।’ (বুখারি: ৪৯৮৭)
দুনিয়ার সামান্যতা বোঝার মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়। ‘আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ খোলাখুলি বর্ণনা করি।’ (সুরা ইউনুস: ২৪)
মুমিনদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন, অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করুন। ‘নিঃসন্দেহে তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল এবং ঈমানদাররা।’ (সুরা মায়েদা: ৫৫)
রাসুল (স.) বলেন, ‘যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।’ (আবু দাউদ: ৪৬৮১)
আরও পড়ুন: যেসব লক্ষণে প্রকাশ পাবে আপনি আল্লাহকে ভালোবাসেন
লজ্জা আল্লাহভীতির পরিচায়ক। এটি ঈমানকে দৃঢ় করে। ‘যখন তোমার লজ্জা নেই তখন তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করো।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৬৯) ইবনুল কায়্যিম বলেন, এ হাদিসের ব্যাখ্যা দুইভাবে করা যায়- কাজের সীমা ও অনুমোদনের বিষয় এবং আচরণের শিষ্টাচার।
ঈমানের দুর্বলতা স্বাভাবিক হলেও সঠিক আমল ও নেক কাজের মাধ্যমে তা দূর করা সম্ভব। নিয়মিত ইবাদত, সৎ মানুষদের সংস্পর্শ এবং গভীর আত্মচিন্তার মাধ্যমে অন্তরকে প্রশান্ত করা যায় এবং ঈমানকে দৃঢ় ও প্রাণবন্ত রাখা যায়।