ধর্ম ডেস্ক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় সুনির্দিষ্ট। এর মধ্যে মাগরিব সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের নামাজ, সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে যার সূচনা এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই যার পরিসমাপ্তি। কিন্তু এই ‘অল্প সময়’ আসলে কতটুকু? অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ঠিক কতক্ষণ পর্যন্ত মাগরিব নামাজ আদায় করা যায়—এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই জাগে।
মাগরিবের সময় শুরু হয় সূর্য সম্পূর্ণভাবে দিগন্তের নিচে চলে যাওয়ার পরপরই। নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন মাগরিবের সময় শুরু হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫৬১) অর্থাৎ, সূর্যের শেষ কণাটি মিলিয়ে যাওয়ার মুহূর্তই হলো এর সূচনা।
আর এই সময় শেষ হয় সূর্যাস্তের পর আকাশে যে লালিমা (শাফাক আহমার) ছড়ায়, তা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। রাসুল (স.) বলেন, ‘মাগরিবের সময় থাকে যতক্ষণ না আকাশের লাল আভা অদৃশ্য হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ৬১২)
আরও পড়ুন: মাগরিব নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
ঋতু ও ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এটি পরিবর্তিত হয়। সাধারণত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাগরিবের সময় থাকে ৪৫ থেকে ৭০ মিনিট পর্যন্ত।
গ্রীষ্মকালে: সময় অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ, প্রায় ৬৫–৭০ মিনিট।
শীতকালে: সময় সংকুচিত হয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৪৫–৫০ মিনিট।
চার মাজহাবই একমত যে, মাগরিবের সময় অত্যন্ত সংকীর্ণ। তাই সুন্নত হলো দেরি না করে দ্রুত আদায় করা।
হানাফি মাজহাব: ইমাম কাসানি (রহ.) উল্লেখ করেন, মাগরিবে বিলম্ব করা মাকরুহ, কারণ সময় সংক্ষিপ্ত এবং কাজা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১২৬)
শাফেয়ি মাজহাব: ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, নবীজি (স.) সূর্যাস্তের পরপরই এটি আদায় করতেন; তাই এটাই সুন্নত। (আল-উম্ম: ১/৭৪)
মালিকি ও হাম্বলি দৃষ্টিভঙ্গি: ইবনে কুদামাহ (রহ.) এর মতো আলিমগণ বলেছেন, এশার আগ পর্যন্ত সময় থাকলেও বিলম্ব না করাই উত্তম। (শারহ সহিহ মুসলিম: ৫/১১৮; আল-মুগনি: ১/৩৬৭)
আরও পড়ুন: মাগরিবের পর যে আমল করলে রহমতের ফেরেশতারা ঘিরে রাখেন
সাহাবি আনাস ইবন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাগরিব আদায় করতেন এবং কখনোই তা বিলম্ব করতেন না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৬০) এটি কেবল একটি অনুমতি নয়; বরং একটি সুস্পষ্ট সুন্নত ও আদর্শ।
মাগরিবের সংক্ষিপ্ত সময় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় জীবন ক্ষণস্থায়ী। সূর্যের আলো যেভাবে মিলিয়ে যায়, তেমনি জীবনের সন্ধ্যাও একদিন নেমে আসবে। মাগরিব আমাদেরকে সময়ের মূল্য, আল্লাহর নির্দেশে দ্রুত সাড়া দেওয়ার কৃতজ্ঞতা এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদতে রূপান্তরের প্রেরণা জোগায়। এটি ইসলামের সময়ানুবর্তিতা ও আত্মশুদ্ধির এক জীবন্ত পাঠ।