ধর্ম ডেস্ক
১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
শপথ বা কসম বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার শিক্ষা দেয় ইসলাম। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অথচ সমাজে মা-বাবা, প্রিয়জন কিংবা কোনো বস্তু বা পবিত্র স্থানের নামে শপথ করার প্রবণতা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি গুরুতর গুনাহ; তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক।
শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করলে তা শরিয়তসম্মত বিবেচিত হয় না এবং সেই শপথ রক্ষা করাও বাধ্যতামূলক নয়। শুধু মা-বাবা নয়; নবী, ফেরেশতা, কাবা শরিফ, কলেমা, মসজিদ কিংবা যেকোনো সৃষ্টির নামে শপথ করা সম্পূর্ণ হারাম।
রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করাকে সরাসরি শিরক বলেছেন। হজরত সাঈদ ইবনু আবু উবাইদাহ (রহ.) বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ‘না! এ কাবার কসম।’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে, সে শিরক করল।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২৫১)
অন্য বর্ণনায় দেখা যায়- একবার ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বাহনে চড়ার সময় তাঁর পিতার নামে কসম করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে বললেন, ‘জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। কেউ কসম করতে চাইলে সে যেন আল্লাহর নামে করে, নতুবা নীরব থাকে।’ (সহিহ বুখারি: ৬১০৮)
এই দলিলগুলো প্রমাণ করে যে মা-বাবা, কাবা, নবী (স.), ফেরেশতা বা কোনো বস্তুর নামে শপথ করা শিরকের পর্যায়ে পড়ে এবং তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন: কোরআন ছুঁয়ে শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারা কী
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করলে সেটি আদৌ শরিয়তসম্মত কসম হিসেবে গণ্য হয় না। ফলে এমন কসম রক্ষা করা বাধ্যতামূলক নয় এবং ভাঙলেও কোনো কাফফারা দিতে হয় না। তবে নিষিদ্ধ পথে শপথ করার কারণে আল্লাহর কাছে তাওবা করা জরুরি।
অন্যদিকে, আল্লাহর নামে করা বৈধ কসম ভঙ্গ করলে কাফফারা আদায় করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হলো- দশ জন মিসকিনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা।’ (সুরা মায়েদা: ৮৯)
আরও পড়ুন: মিথ্যা শপথের পরিণাম
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা আনুগত্য করো না প্রত্যেক এমন ব্যক্তির, যে বেশি কসমকারী, লাঞ্ছিত।’ (সুরা কলম: ১০)
এ আয়াতে মিথ্যা কসমকারী ও অতিরিক্ত শপথকারীদের থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। সামাজিক চাপ, আবেগ বা বিব্রত পরিস্থিতিতে মা-বাবা বা অন্য কারো নামে কসম করা ইসলামে বৈধ নয়। এমন শপথ কার্যকর নয় এবং তা পালন করার বাধ্যবাধকতাও নেই। কথায় কথায় শপথ করার অভ্যাসও একজন মুমিনের জন্য অনুপযুক্ত।
অপ্রয়োজনে কসম না করা একজন মুমিনের উত্তম গুণ। মানুষকে আবেগে বা সংকটে ফেলে শপথ করানো একটি নিন্দনীয় কাজ। কেউ যদি মা-বাবা বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ পন্থায় শপথ করে, তাকে কোমলভাবে সঠিক বিধান জানানো মুসলিম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। হজরত ইবনে উমর (রা.)-এর আচরণ থেকে আমরা শিখি- ভুল শপথকারীকে সদয়ভাবে সত্য শিক্ষা দেওয়া উচিত।
মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত- প্রয়োজন হলে কেবল আল্লাহর নামেই শপথ করা এবং তা রক্ষা করা, অপ্রয়োজনে শপথ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। কসম ভঙ্গ হলে শরিয়ত নির্দেশিত কাফফারা আদায় করা অপরিহার্য। শপথ সংক্রান্ত ইসলামি নির্দেশনা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।