ধর্ম ডেস্ক
০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম
শীতকালকে ইসলামি শরিয়তে ‘গনিমাতুল আবিদ’ বা ইবাদতকারীর গনিমতের মৌসুম বলা হয়েছে। এই সময়ে দিন ছোট, রাত দীর্ঘ এবং প্রকৃতি মুমিনের ইবাদতের জন্য বিশেষ অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। নিম্নে শীতকালের তিনটি সহজলভ্য গনিমত ও এর পদ্ধতি উপস্থাপন করা হলো।
শীতে দিন ছোট থাকে বলে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত সহজ।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘শীতকালের সিয়াম অনায়াসলব্ধ গনিমত সম্পদের মতো।’ (তিরমিজি: ৭৯৫)
আবু হুরায়রা (রা.) একদিন তাঁর শিষ্যদের বললেন- ‘আমি কি তোমাদেরকে সহজ গনিমত সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন- শীতকালে রোজা রাখা।’ (সুনানে বায়হাকি: ৪/২৯৭)
পরামর্শ: সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার এবং মাসে তিনটি আইয়ামুল বিজের নফল রোজা রাখুন।
আরও পড়ুন: শীতকালে সহজে পালনযোগ্য ৬টি মূল্যবান আমল
শীতের দীর্ঘ রাত ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির আজকারের জন্য মহান নেয়ামত। কেউ চাইলে ভালোভাবে ঘুমিয়েও শেষ রাতে উঠতে পারে।
রাসুল (স.) বলেছেন, শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল। এর দিন ছোট হয় ফলে মুমিন দিনের বেলা রোজা রাখে এবং রাত দীর্ঘ হয় ফলে মুমিন রাতের বেলা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে। (সুনানে কুবরা: ৮৪৫৬)
প্রখ্যাত তাবেয়ি উবাইদ ইবনে উমাইর (রহ) শীতকালে বলতেন- ‘হে কোরআনওয়ালারা, নামাজের জন্য রাত বড় হয়েছে এবং রোজার জন্য দিন ছোট হয়েছে। সুতরাং তোমরা (একে) গনিমত মনে করো।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯৮৩৬)
পরামর্শ: রাতের শেষ তৃতীয়াংশে কমপক্ষে ২/৪ রাকাত তাহাজ্জুদ ও কিছু সময় কোরআন তেলাওয়াতের নিয়ম তৈরি করুন।
আরও পড়ুন: শীতের যে আমলে জান্নাতের পোশাক নির্ধারিত হয়
শীতের ঠান্ডা পানিতে অজু করা কষ্টকর হলেও এতে রয়েছে পাপ মোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধির বিশেষ সুযোগ।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল আপনি বলুন। তিনি বললেন, ‘অসুবিদা ও কষ্টের মধ্যেও পূর্ণরূপে অজু করা, মসজিদের দিকে পদচারণা করা এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা—এগুলোই রিবাত (সীমান্ত প্রহরা)।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫১)
উল্লেখ্য: হাদিসে আছে, সীমান্ত পাহারা দেওয়া লোক জাহান্নামের আগুন চোখে দেখবে না। (আল মুজামুল কাবির লিত-তিবরানি: ১০০৩) শীতের কষ্টসাধ্য অজুকে সেই মর্যাদাপূর্ণ আমলের সমান ঘোষণা করেছেন নবীজি (স.)।
পরামর্শ: ঠান্ডা সত্ত্বেও সুন্নত পদ্ধতিতে পূর্ণ অজু করুন এবং ফজরের নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে আদায়ে সচেষ্ট হোন।
শীতকাল একটি বিশেষ নেয়ামত, যা মুমিনের আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের মৌসুম। এই তিন গনিমত- ছোট দিনে রোজা, দীর্ঘ রাতে তাহাজ্জুদ ও কষ্টের অজুর সওয়াব সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই আল্লাহর নৈকট্য ও মহান প্রতিদান লাভ করতে পারি। আসুন, এই ‘গনিমতের বসন্ত’কে ইবাদতের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ করে তুলি।