ধর্ম ডেস্ক
০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
হজ ও ওমরার গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মধ্যে সাফা-মারওয়ার সাঈ একটি উল্লেখযোগ্য আমল। অনেক নারী হায়েজ (মাসিক) অবস্থায় সাঈ আদায় নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। ইসলামি ফিকহে বিষয়টি স্পষ্টভাবে নির্দেশিত। এই প্রতিবেদন নারীদের জন্য পথনির্দেশক হিসেবে সাজানো হয়েছে।
হায়েজ বা নেফাস অবস্থায় সাঈ সম্পূর্ণ সহিহ ও গ্রহণযোগ্য। এতে কোনো কাফফারা বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না। তবে তাওয়াফের জন্য পবিত্র অবস্থায় থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ তাওয়াফ নামাজের মতো পবিত্রতার শর্তযুক্ত ইবাদত। কিন্তু সাঈ নামাজের মতো ইবাদত নয় বিধায় হায়েজ থাকলেও তা আদায় হয়ে যায়। যদিও সাঈ পবিত্র অবস্থায় করা সুন্নত।
আরও পড়ুন: ঋতুমতী নারীদের হজ-ওমরার বিধান কী?
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর হায়েজ শুরু হলে নবী (স.) বলেন, ‘তুমি হাজিদের সমস্ত কাজ করো, কিন্তু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৩০৫)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘বায়তুল্লাহর তাওয়াফ সম্পন্ন করার পর সাঈ করার পূর্বে যদি কারো হায়েজ এসে যায়, তাহলে সে উক্ত অবস্থায় সাঈ করে নিতে পারবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৪৫৮৩)
১. হায়েজ তাওয়াফের আগে শুরু হলে: সাঈ না করাই উত্তম। পবিত্র হওয়ার পর প্রথমে তাওয়াফ এবং এরপর সাঈ করা সুন্নত পদ্ধতি। তবে এটি একটি উত্তম পদ্ধতির নির্দেশনা, কোনো কঠোর নিষেধাজ্ঞা নয়।
২. জরুরি অবস্থা (সময় কম থাকলে): দেশে ফেরার সময় হলে হায়েজ থাকলেও বিশেষ প্রয়োজনে তাওয়াফ করা যায়, তবে হানাফি মাজহাব অনুযায়ী এর জন্য একটি কোরবানি (দম) দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/৫১৮-৫১৯) এছাড়া, ওষুধের মাধ্যমে হায়েজ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে তাওয়াফ ও সাঈ করাও জায়েজ। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৫/৪৯১)
আরও পড়ুন: হজে নারীদের সতর্কতা: কী করবেন, কী করবেন না
অতএব, হায়েজ অবস্থায় সাফা-মারওয়ার সাঈ শরিয়তসম্মত, সহিহ এবং আদায়যোগ্য। নারীদের জন্য এটি একটি সহজসাধ্য বিধান। ফিকহি ব্যাখ্যায় উল্লিখিত ‘নিষেধ’ বা ‘বিলম্ব’ মূলত আমলের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি ও বিশেষ পরিস্থিতির সমাধান নির্দেশ করে। তাই নারীরা হায়েজ অবস্থায় সাঈ নিয়ে অনর্থক চিন্তা বা সংকোচবোধ ছাড়াই নির্ভয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সম্পন্ন করতে পারেন।
(তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি: ৩০৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৪৫৮৩; আল-মাবসুত, সারাখসি: ৪/৫১; বাদায়েউস সানায়ে: ২/৩১৯; আল-মাসালিক ফিল মানাসিক: ১/৪৭০; রদ্দুল মুহতার: ২/৫১৮-৫১৯; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৫/৪৯১)