images

ইসলাম

ঢাকায় প্রতি ৪০ মিনিটে সংসার ভাঙছে: বিশিষ্ট আলেমদের জরুরি সতর্কবার্তা

ধর্ম ডেস্ক

০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম

ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৪টি এবং প্রতি ৪০ মিনিটে একটি সংসার তালাকের মাধ্যমে ভেঙে পড়ছে—এই উদ্বেগজনক তথ্য সামনে রেখে দেশের দুই প্রখ্যাত ইসলামি আলোচক মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমাদুল্লাহ তালাকের ভয়াবহ সামাজিক পরিণতি ও এর বিকল্প পথ নিয়ে জরুরি সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

পরিসংখ্যানের নির্মম বাস্তবতা

শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই প্রতি বছর ১,৪০০-এর বেশি তালাক নিবন্ধিত হয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় ৩৭টি দাম্পত্য সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটছে। এই ভাঙনের পেছনে পশ্চিমা ভোগবাদী দর্শন, পারস্পরিক অবিশ্বাস, সন্দেহপ্রবণতা, একে অপরের হকের প্রতি উদাসীনতা এবং অবৈধ সম্পর্ককে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা।

মিজানুর রহমান আজহারী: ‘বিচ্ছেদ কোনো সমাধান নয়’

এক ফেসবুক পোস্টে মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘বিচ্ছেদ কোনো সমাধান নয়, বরং স্বস্তির আবরণে মোড়া দীর্ঘ অনুতাপ ও অন্তহীন আত্মিক যন্ত্রণার সূচনা।’ তিনি সমস্যা সনাক্ত করে যৌক্তিক সমাধানের পথে হাঁটার ওপর জোর দেন।

আজহারী সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, ‘শয়তান খুব খুশি হয় যখন কোনো ঈমানদারের সুখী দাম্পত্য জীবন ভাঙতে পারে।’ হাদিসে বর্ণিত আছে, শয়তান তার অনুচরদের মধ্যে তাকে বিশেষ মর্যাদা দেয় যে কারো দাম্পত্য জীবন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। তিনি কোরআনের সুরা বাকারার ২০৮ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে মুসলিমদের শয়তানের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন: বাড়াবাড়ি নয়, ইসলাম প্রচারে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের আহ্বান আজহারীর

শায়খ আহমাদুল্লাহ: ‘ভাঙার আগে শতবার ভাবুন’

একইভাবে শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘তালাক কোনো প্রশংসনীয় কাজ নয়; বরং নিরুপায় অবস্থায় একটি বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার শেষ উপায়।’ তিনি জোর দেন, ‘ভাঙার আগে একবার নয়, শতবার ভাবা উচিত- সংশোধনেই সমাধান, বিচ্ছেদে নয়।’

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তালাকের নির্মম বলি হয় সন্তানরা। বাবা-মার বিচ্ছেদের মানসিক আঘাত তারা সারাজীবন বয়ে বেড়ায়।’ 

সমাধানের পথ

দুই আলেমই একটি বিষয়ে একমত যে, তালাকের আগে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো জরুরি:
১. সমস্যাটির মূলে যাওয়া ও খোলামেলা আলোচনা
২. ধৈর্য, সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা
৩. পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ বা অভিজ্ঞ আলেম-উলামার মধ্যস্থতা নেওয়া
৪. ইসলামি দাম্পত্য অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞানার্জন
৫. আল্লাহর কাছে সাহায্য ও হেদায়াত প্রার্থনা করা

শায়খ আহমাদুল্লাহ তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ হয়তো মনে হচ্ছে একা থাকাই স্বস্তির, কিন্তু এই তারুণ্য স্থায়ী নয়। বার্ধক্যে যখন একলা বিছানায় অসুস্থ হয়ে কাতরাবেন, তখন পাশে মাথায় রাখার মতো একটি ভালোবাসার হাতও পাবেন না।’

আরও পড়ুন: তরুণ-তরুণী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

সামাজিক দায়বদ্ধতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকা তালাকের হার সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। পারিবারিক বন্ধন রক্ষায় ধর্মীয় সচেতনতার পাশাপাশি দাম্পত্য কাউন্সেলিং সেবার প্রসার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।

মিজানুর রহমান আজহারী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন এই দোয়ার মাধ্যমে- ‘আল্লাহ আমাদের ঘরগুলোকে সাকিনায় (শান্তি ও প্রশান্তি) ভরপুর করে দিন।’ অন্যদিকে শায়খ আহমাদুল্লাহ সবার জন্য তাঁর পরামর্শ হলো- ‘সংসার ঠিক মাটির হাঁড়ির মতো; গড়তে সময় লাগে, ভাঙতে লাগে এক মুহূর্ত। ভাঙার পরই বোঝা যায়, এটিই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।’

এই যুগান্তকারী সতর্কবার্তা সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে এবং পারিবারিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গভীর ভাবনার উদ্রেক করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।