images

ইসলাম

বিয়ে করলে রিজিক বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি: কোরআন-হাদিসের দলিল

ধর্ম ডেস্ক

২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম

ইসলামে বিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদত এবং ব্যক্তির নৈতিক ও পার্থিব জীবনের সমৃদ্ধির মাধ্যম। জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ-অর্থ, মানসিক স্থিতি, পাপ ও নৈতিক দুর্বলতা সমাধানে বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোরআন ও সহিহ হাদিস স্পষ্টভাবে জানায় যে, পবিত্র উদ্দেশ্যে বিয়ে করলে ব্যক্তি রিজিক বৃদ্ধি, মানসিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সাহায্য লাভ করেন। এই প্রবন্ধে আমরা কোরআন, হাদিস এবং সাহাবিদের উদাহরণের আলোকে বিয়ের গুরুত্ব, রিজিক বৃদ্ধি ও সামাজিক উপকারিতা তুলে ধরছি।

কোরআনের অঙ্গীকার

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা নুর: ৩২)’ এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, অর্থের অভাব বিয়ের বাধা নয়; বরং আল্লাহ নিজে রিজিক নিশ্চিত করবেন।

আরও পড়ুন: কত বছর বয়সে বিয়ে করতে বলেছেন নবীজি

বিবাহিতদেরকে আল্লাহর বিশেষ সাহায্য

রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ নিজের ওপর দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন: ১. আল্লাহর পথে জিহাদকারী, ২. মুক্তিপণ আদায়ে চেষ্টা করা দাস এবং ৩. পবিত্র জীবন অর্জনের উদ্দেশ্যে বিবাহকারী।’ (তিরমিজি: ১৬৫৫) সুতরাং পবিত্র উদ্দেশ্যে বিয়ে করলে আল্লাহ নিজে রিজিক নিশ্চিত করেন। সাহাবায়ে কেরামও তরুণদের বিবাহের জন্য উৎসাহিত করেছেন। হজরত আবু বকর (রা.) বলতেন, ‘তোমরা বিয়ে করে আল্লাহর নির্দেশ পালন করো; আল্লাহও তোমাদের জন্য তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন।’ (ইবনে আবি হাতেম: ৮/২৫৮২) আর হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের মাধ্যমে প্রাচুর্যের অনুসন্ধান করো।’ (জামিউত তাবিল: ১৭/২৭৫)

বিয়ে পার্থিব সাফল্য ও স্বাচ্ছন্দ্য আনে

রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মানুষের সাফল্যের কারণ তিনটি: সতীসাধ্বী স্ত্রী, উপযুক্ত বাসস্থান ও উপযুক্ত বাহন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১/১৬৮) তিনি আরও বলেছেন, ‘দুনিয়ার সর্বোত্তম উপভোগ্য হলো সতীসাধ্বী নারী।’ (মুসলিম: ১৪৬৭)

আরও পড়ুন: পাত্রের যেসব গুণ দেখে বিয়ে করতে বলেছেন নবীজি

বিয়ে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে

রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে পুণ্যবতী নারীকে স্ত্রী হিসেবে পেল, আল্লাহ যেন তার দ্বীনের একটি অংশ পালনে সহায়তা করলেন।’ (তাবারানি: ১/২৯৪) অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বিবাহ করল, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল।’ (বায়হাকি) বিবাহ লজ্জাস্থান, মুখের কথা ও উদরের কারণে সংঘটিত অধিকাংশ পাপ থেকে রক্ষা করে এবং ব্যক্তি পবিত্র জীবন অর্জনে সহায়তা পায়।

বিবাহ মানসিক প্রশান্তি ও ভালোবাসার কেন্দ্র

আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম: ২১) বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মানসিক স্থিতি তৈরি হয়, যা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে শান্তি প্রদান করে।

পাপ থেকে রক্ষা: বিয়ে শক্তিশালী উপায়

বিয়ে চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার; যা জান্নাতের রাস্তা খুলে দেয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই উরুর মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থান) জামানত আমাকে দেবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার।’ (বুখারি: ৬৪৭৪)

আরও পড়ুন: বিয়ে ছাড়াই জীবন কাটিয়ে দিলে কি জান্নাত হারাম? 

বিয়ে কখন জরুরি

ব্যক্তির অবস্থান অনুযায়ী বিধান ভিন্ন। যার বিবাহ না করলে গুনাহের আশঙ্কা থাকে, তার জন্য ওয়াজিব; যার যৌন চাহিদা আছে কিন্তু গুনাহের ভয় নেই, তার জন্য সুন্নত; আর যার যৌন চাহিদা নেই, তার জন্য বৈধ। যারা বিবাহে সক্ষম নয়, তাদের জন্য আল্লাহ সংযম অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। (সুরা নূর: ৩৩)

বিয়ে বিলম্বের ক্ষতি

বর্তমান সমাজে সম্পদ, ক্যারিয়ার বা আনুষ্ঠানিকতার কারণে বিয়ে বিলম্ব হয়। এতে তরুণ-তরুণীরা অপরাধ, ব্যভিচার ও পঙ্কিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। ইসলাম সমাজে যুবকদের দ্রুত বিবাহ সহজ করার নির্দেশ দিয়েছে, যা অপরাধ নির্মূল ও নৈতিক সমাজ গঠনে সহায়ক।

মোটকথা, কোরআন ও সহিহ হাদিস স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে বিবাহ রিজিক বৃদ্ধি করে, মানসিক প্রশান্তি দেয়, পাপ থেকে রক্ষা করে, দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের পথ খুলে দেয় এবং আল্লাহ নিজে বিবাহকারীকে সাহায্য করেন। তাই সমাজে বিবাহকে সহজ করা ও যুবক-যুবতীদের বিয়ে দেওয়াকে ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বিবাহের তাওফিক, বিবাহিত জীবনকে বরকতময় এবং রিজিকের বৃদ্ধি দান করুন। আমিন।