images

ইসলাম

যে কারণে সাফা-মারওয়া সায়ি করা ওয়াজিব

ধর্ম ডেস্ক

২৮ জুন ২০২২, ১১:৩৩ এএম

সাফা-মারওয়া সায়ি করা মহান আল্লাহর অনন্য এক নিদর্শন। এটি পবিত্র হজের অন্যতম একটি আমল। হজ ও ওমরায় সাফা-মারওয়া সায়ি করা ওয়াজিব। তবে তা সুন্নত পদ্ধতিতেই করতে হবে, তা না হলে ওয়াজিব আদায় হবে না। আর কেউ তা করতে ভুলে গেলে বা ইচ্ছাকৃত না করলে তার ওপর কাফফারা হিসেবে দম ওয়াজিব হবে।

সায়ি আরবি শব্দ। অর্থ- দ্রুত চলা ও চেষ্টা করা। ইসলামি শরিয়তে সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে বিশেষ রীতিতে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে সায়ি বলা হয়। উল্লেখ্য, সাফা ও মারওয়া পবিত্র কাবা ঘরের পূর্ব-দক্ষিণ ও পূর্ব-উত্তর কোণে অবস্থিত দুটি বিখ্যাত পাহাড়।

মা হাজেরা (আ.)-এর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতেই হজ ও ওমরায় সায়ি করার এ বিধান। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়- মহান আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষার মুখোমুখি করেছিলেন। সেই পরীক্ষাগুলোর একটি ছিলো— আল্লাহ তাআলার আদেশে স্ত্রী ও দুগ্ধপোষ্য ছেলে ইসমাইলকে সিরিয়া থেকে মক্কার মরুভূমিতে রেখে যেতে হয়েছিল। তখন মক্কা ছিল নির্জন মরুপ্রান্তর।

সেখানে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে থাকতে হবে মা হাজেরা (আ.)-কে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে সেখানে থাকা শুরু করার কিছুদিন পর খাদ্য ও দুগ্ধ ফুরিয়ে গেলে উপায়ন্তর না দেখে হাজেরা (আ.) ছুটে চললেন নিকটতম পাহাড় সাফার দিকে। সাফা সংলগ্ন উপত্যকা থেকে নিয়ে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত কোথাও পানির সন্ধান মিলল না। মারওয়া পাহাড়ের ওই পাশে হয়তো পানি পাওয়া যাবে—এমনটা ভেবে সাফা থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে আরোহণ করলেন মারওয়ার চূড়ায়।

সেখানে দাঁড়িয়েও চারদিকে চোখ বুলিয়ে ব্যর্থ হলেন। শিশুপুত্রের মুখে পানি তুলে দেওয়ার জন্য এভাবেই অস্থির হয়ে সাতবার সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন তিনি। উভয় পাহাড়ের নিচু উপত্যকাটি প্রত্যেকবার তিনি দৌড়ে অতিক্রম করেছেন। কেননা ওই স্থান থেকে শিশু ইসমাইলকে দেখতে পেতেন না। মা হাজেরার এই অস্থিরতা ও দৌড়াদৌড়ি আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দ হয়ে যায়। 

আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মুসলিম মিল্লাতের জন্য হজরত হাজেরা (আ.)-এর এ কাজকে স্মৃতি স্মারকস্বরূপ হজ ও ওমরায় রুকন হিসেবে সাব্যস্ত করেন। পুরুষরা সায়ির মধ্যে পাহাড়ের উপত্যকার স্থানটুকু (কিছুটা হাল্কা দৌড়ের মতো) অতিক্রম করেন। যা বর্তমানে সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত আছে। তবে এ স্থানটুকু নারীদের দৌড়াতে হয় না; কারণ মা হাজেরার দৌড়ানোর বদৌলতে এবং তাঁর সম্মানে আল্লাহ তাআলা কেয়ামত পর্যন্ত সব নারীকে দ্রুত চলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। 

অবশেষে আল্লাহ তাআলা হজরত জিব্রাইল (আ.)-কে পাঠিয়ে ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের কাছে একটি ঝরনা জারি করে দিলেন। এটাই পরবর্তীতে জমজম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ইমাম বুখারি (রহ.) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ সংক্রান্ত দীর্ঘ একটি হাদিস বর্ণনা করেন। হাদিসের শেষাংশে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- হাজেরার এই অস্থির ছুটোছুটির স্মারক হিসেবেই হজে ও ওমরায় সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সায়ি করা ওয়াজিব করা হয়েছে। (বুখারি: ১/৪৭৪-৪৭৫)

হাজেরা (আ.) যে অস্থিরতা, অসহায়ত্ব এবং আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষিতা নিয়ে ছুটোছুটি করছিলেন সাফা মারওয়ায় সায়িকারীদেরও উচিত সেই অসহায়ত্ব, নিঃস্বতা ও আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষিতার বোধ ও বিশ্বাস নিয়ে সায়ি করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মা হাজেরার অস্থির ছোটাছুটির গুরুত্ব বোঝার এবং নবী (স.)-এর দেখানো পদ্ধতিতে সাফা-মারওয়া সায়ি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।