ধর্ম ডেস্ক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
সফলতা ও ব্যর্থতা মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা। জীবনের পথে কেউ সফলতার শিখরে পৌঁছে যায়, আবার কেউ ব্যর্থতার গ্লানি বরণ করে। প্রকৃত সফলতা অর্জনের জন্য কিছু শর্ত ও নীতিমালা রয়েছে, যেগুলো মেনে চললে মানুষের জীবনে সাফল্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়। আসল সফলতা কী এবং কারা এর প্রকৃত অধিকারী, এর সুস্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায় পবিত্র কোরআনে। এখানে কোরআনের আলোকে যারা নিশ্চিত সফলতা লাভের যোগ্য, তাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের ওপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।’ (সুরা বাকারা: ৩-৫) আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আখেরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।’ (সুরা লুকমান: ৪-৫)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৪)
আরও পড়ুন: সৎকাজের আদেশ ও অন্যায়ে বাধা দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে (প্রত্যেকের আমল)। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে।’ (সুরা আরাফ: ০৮)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং যেসব লোক তাঁর ওপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নুরের অনুসরণ করেছে যা তার সঙ্গে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধু তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৭)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রাসুল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে।’ (সুরা তাওবা: ৮৮)
আরও পড়ুন: আল্লাহর রাস্তায় শহীদের মর্যাদা নিয়ে নবীজির হাদিস
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। তারাই সফলকাম।’ (সুরা রুম: ৩৮)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদের শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদের জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। (সুরা মুজাদালাহ: ২২)
যারা নিজেদের অভাব সত্ত্বেও অন্য মুহাজির ভাইদেরকে নিজের চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়, তাদের মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয় এবং এরাই সফলকাম। (সুরা হাশর: ৯)
আরও পড়ুন: নিজের ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সওয়াব
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য-নির্ধারক তীরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সুরা মায়েদা: ৯০)
আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা নুর: ৩১)
যখন মুমিনদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে ফিরে বিচার নেওয়ার জন্য ডাকা হয়, তাদের একমাত্র কথা হয়- ‘আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম’। এরাই সফলকাম। (সুরা নুর: ৫১)
বস্তুত, কোরআনে বর্ণিত সফলতা কোনো ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াবি অর্জন নয়; বরং এটি এমন এক সার্বিক সাফল্য যা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে। এ সফলতা কেবল তাদের জন্য নির্ধারিত, যাদের মধ্যে উপরোক্ত গুণাবলী বিদ্যমান। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে প্রকৃত সফলকাম হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।