ধর্ম ডেস্ক
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় ও অলৌকিক ঘটনা হলো মেরাজ। এটি ছিল রাসুলুল্লাহ (স.)-এর এক রাতের অলৌকিক সফর, যা মানবজাতির ইতিহাসকে চিরতরে পাল্টে দিয়েছিল। মক্কার সেই কঠিন সময়ে, যখন নবীজি (স.) তায়েফবাসীর কাছ থেকে নির্যাতন সহ্য করে ফিরেছেন, ঠিক তখনই আল্লাহ তাঁকে এই বিশেষ নেয়ামত দান করেন।
মেরাজের অলৌকিক সফর শুরু হয় জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে। রাতের অন্ধকারে তিনি ‘বুরাক’ নামক এক আশ্চর্য বাহনে চড়ে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা এক মুহূর্তের মধ্যে পাড়ি দেন। (সুরা ইসরা: ১)। সেখানে পৌঁছে তিনি পূর্ববর্তী সব নবীর উপস্থিতিতে ইমামতি করেন, যা তাঁর উচ্চ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ। এরপর তিনি সপ্ত আসমান পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছান।
আরও পড়ুন: শবে মেরাজের ঘটনা কোন সুরায় আছে, হাদিসে কী আছে
সফরের প্রতিটি আসমানে নবীজি (স.)-এর জন্য অপেক্ষা করছিলেন পূর্ববর্তী নবীরা। এই সাক্ষাৎগুলো ছিল মানব ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের সঙ্গে এক অভাবনীয় মিলন।
মেরাজের এই মহিমান্বিত সফর মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় উপহার নিয়ে আসে। প্রথমে আল্লাহ তাআলা পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। হযরত মুসা (আ.)-এর পরামর্শে নবীজি (স.) আল্লাহর কাছে বারবার নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য মিনতি জানান। অবশেষে তা পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়, কিন্তু এর সওয়াব এখনও পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান (সহিহ বুখারি: ৩৮৮৭)। এটি ছিল বিশ্ব মুসলিমের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অনন্য উপহার।
আরও পড়ুন: নামাজ মুমিনের মেরাজ কথাটির অর্থ ও সত্যতা
মেরাজের সফরে নবীজি (স.) জান্নাত ও জাহান্নামের বাস্তব চিত্র সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। তিনি দেখেন মুক্তার প্রাসাদ, মেশকের মাটি আর অফুরন্ত নেয়ামতে ভরা জান্নাত (সহিহ বুখারি: ৭৫১৭)। একইসঙ্গে তিনি জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তিও প্রত্যক্ষ করেন, যেখানে গীবতকারী ও অহংকারীদের ভয়ংকর শাস্তির ব্যবস্থা দেখেন।
মেরাজ আল্লাহর অসীম ক্ষমতার এক জ্বলন্ত প্রমাণ। এই অলৌকিক সফরের সবচেয়ে বড় উপহার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আজও বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনকে সুশৃঙ্খল করে। এটি নবীজি (স.)-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর অন্যতম, যা মুসলিমদের জীবনকে আধ্যাত্মিকতার পথে পরিচালিত করে।
(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুরা ইসরা, সুরা নাজম, জামে তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)