images

ইসলাম

নামাজে রুকু ও সেজদার সঠিক নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম

নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। যা আদায় করতে হয় যথাযথ নিয়ম ও সুন্নাহ মোতাবেক। নামাজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রুকু (নত হওয়া) ও সেজদা (মাথা অবনত করা)। এই দুটি রুকন (স্তম্ভ) সঠিকভাবে আদায় না হলে নামাজ শুদ্ধ হয় না এবং এর আত্মিক প্রভাবও হারিয়ে যায়। এই প্রতিবেদনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে রুকু ও সেজদার সঠিক নিয়ম এবং এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরা হলো।

১. রুকুর সঠিক পদ্ধতি ও ফিকহি নির্দেশনা

শারীরিক অবস্থান: তাকবির বলে রুকুতে যাওয়া। রুকুতে মাথা ও নিতম্ব বরাবর রাখা। পিঠকে বিছিয়ে দেওয়া। দৃষ্টি পায়ের আঙ্গুলের দিকে নিবদ্ধ রাখা। 

হাঁটু ও দৃষ্টি: রুকুর সময় দুই হাত দিয়ে হাঁটু শক্তভাবে ধরে রাখা সুন্নত। হাঁটু ধরার সময় আঙুলগুলোকে ছড়িয়ে রাখা। পায়ের গোছাকে সোজা রাখা। 

দোয়া ও ফিকহি বিধান: রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ (আমার মহান রব পবিত্র) বলা। রুকু থেকে ওঠার সময় ইমামের ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলা, মুকতাদির ‘রব্বানা লাকাল হামদ’ বলা, একাকী নামাজি ব্যক্তির উভয়টা বলা। 

(বাদায়েউস সানায়ে: ১/২০৭, ২০৮; আল বাহরুর রায়েক: ১/৩১৬, ১/৩১৫; হিদায়া : ১/১০৬; আল ফিকত আলাল মাজাহিবিল আরবাআ: ১/২৬০)

আরও পড়ুন: রুকু-সেজদায় ৩টি দোয়া পড়ার অভ্যাস করুন

সাধারণ ভুল: অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে পিঠ সোজা না করে রুকু করা হয়। এছাড়া রুকুতে পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে দ্রুত উঠে যাওয়াও একটি বড় ভুল। ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ভুল করলে নামাজ অশুদ্ধ হতে পারে।

২. সেজদার সঠিক নিয়ম ও তাৎপর্য

সাত অঙ্গে সেজদা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমাকে সাতটি অঙ্গের ওপর সেজদা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে: কপাল (সঙ্গে নাক), দুই হাত, দুই হাঁটু ও দুই পায়ের আঙ্গুল।’ (সহিহ বুখারি: ৮১২) এই অঙ্গগুলোর কোনো একটি ইচ্ছাকৃতভাবে মাটি থেকে তুলে রাখলে সেজদা বাতিল হয়ে যাবে। (দুররুল মুখতার: ১/৪৪৭)

হাঁটু, নাক ও মাথা রাখার নিয়ম: তাকবির বলা অবস্থায় সেজদায় যাওয়া। প্রথমে উভয় হাঁটু মাটিতে রাখা। তারপর কেবলামুখী করে হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখা। তারপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা বরাবর নাক রাখা। তারপর কপাল রাখা। অতঃপর দুই হাতের মাঝে সেজদা করা ও দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। সেজদায় পেট ঊরু থেকে পৃথক রাখা।

নারী-পুরুষের পার্থক্য: পুরুষদের জন্য সেজদার সময় কনুই এবং বাহু শরীর থেকে আলাদা থাকবে। অন্যদিকে, নারীদের জন্য বাহু ও কনুই শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা সুন্নত। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ২৭৭৭)

সেজদার দোয়া ও অনুক্রম: সেজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ (আমার সর্বোচ্চ রব পবিত্র) পাঠ করা। তাকবির বলা অবস্থায় সেজদা থেকে ওঠা। প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর উভয় হাত, তারপর উভয় হাঁটু ওঠানো।

(বুখারি: ৮০৩, ৮০৭, ৮৮২, ৮২৫; নাসায়ি: ১০৮৯, আবু দাউদ: ৮৩৮, ৭৩৫, ৮৭০; মুসনাদে আহমদ: ১৮৮৯৪, ১৮৮৮০; মুসলিম: ৪০১; ৪৯৬; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ২৯৫৮)

আরও পড়ুন: নারীদের সেজদার সঠিক পদ্ধতি

৩. রুকু ও সেজদার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

রুকু ও সেজদার রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দার সেজদারত অবস্থায়ই তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সর্বোত্তম অবস্থা (বা মুহূর্ত)। অতএব তোমরা অধিক পরিমাণে দোয়া পড়ো।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৮২) 

এই সময় দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিটি রুকু ও সেজদা বান্দার গুনাহ মোচন করে এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে। (সহিহ মুসলিম: ৪৮৩)

সারকথা, রুকু ও সেজদা নামাজের মূল ভিত্তি, যার ওপর নামাজের গ্রহণযোগ্যতা সর্বাধিক নির্ভরশীল। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী শুদ্ধভাবে এই আমলগুলো সম্পন্ন করা। নামাজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি বান্দার আত্মার পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগের মাধ্যম।

আসুন, আমরা আমাদের নামাজের মান উন্নত করি, যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে আত্মিক পূর্ণতার পথে এগিয়ে যেতে পারি।