ধর্ম ডেস্ক
২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
পার্থিব ধন-সম্পদ, পদমর্যাদা বা সামাজিক প্রতিপত্তিকে মানুষ সাধারণত সাফল্য মনে করে। কিন্তু আল্লাহর কাছে প্রকৃত সাফল্য হলো পরকালীন মুক্তি বা জান্নাত লাভ। যারা এই প্রকৃত সাফল্য অর্জন করে, তারা হলেন নেককার বান্দা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)
নেককার বান্দাদের কিছু বিশেষ গুণাবলী রয়েছে, যা তাদেরকে আলাদা পরিচয় দেয় এবং সর্বোচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দেয়। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
নেককার বান্দাদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করেন না। শিরক হলো সকল পাপের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং যার ক্ষমা নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না; অন্যসব গুনাহ তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা: ৪৮)
নেককার বান্দারা রাতের নীরবতা কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের গোপন মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তাদের পিঠ শয্যা থেকে আলাদা থাকে; তারা তাদের রবকে ডাকে ভয়ে ও আশা নিয়ে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৬)
আরও পড়ুন: তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমানোর ফজিলত
নেককার বান্দারা অশালীন ও অপদস্তকারী মানুষের সঙ্গে বিতর্কে যুক্ত হন না। তারা ভদ্র ও শান্তভাবে তাদের থেকে দূরে থাকেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘যখন তারা অনর্থক কথাবার্তা শুনে, তখন মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে- আমাদের কাজ আমাদের, তোমাদের কাজ তোমাদের। তোমাদের উপর “সালাম।” আমরা অজ্ঞদের সাহচর্য চাই না’ (সুরা কাসাস: ৫৫)
নেককার বান্দারা পৃথিবীতে বিনয়ী ও নম্রভাবে চলাফেরা করেন। তাদের অন্তরে কোনো ধরনের অহংকার থাকে না। হাদিসে এসেছে, ‘যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৯১)
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘জমিনে গর্বভরে চলাফেরা করো না, তুমি কখনো জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না আর উচ্চতায় পর্বতের ন্যায় হতেও পারবে না।’ (সুরা ইসরা: ৩৭)
আরও পড়ুন: ১৪ পাপের শাস্তি দুনিয়ায় দেওয়া হয়
নেককার বান্দারা সম্পদ ব্যয়ে মধ্যপন্থী হন। তারা অপচয়ও করেন না, কৃপণতাও প্রদর্শন করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘যখন তারা ব্যয় করে, তারা অপচয়ও করে না, কৃপণতাও করে না; বরং মধ্যম পথ অবলম্বন করে।’ (সুরা ফুরকান: ৬৭)
নেককার বান্দারা খুন ও ব্যভিচার থেকে নিজেদের রক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হলো জাহান্নাম।’ (সুরা নিসা: ৯৩)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তার অন্তরের ঈমান ক্ষয় হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ)
নেককার বান্দারা সবসময় সত্য কথা বলেন এবং মিথ্যা, অপবিত্র কথা থেকে নিজেদের রক্ষা করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘মুনাফিকের তিনটি লক্ষণ: মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, আমানতের খেয়ানত করা।’ (সহিহ বুখারি)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’ (সুরা আহজাব: ৭০)
আরও পড়ুন: ঈমান মজবুত হয় যেসব আমলে
নেককার বান্দারা শুধু নিজের নেক কাজ করেন না, বরং পরিবার ও সমাজকেও নেক কাজের প্রতি উৎসাহিত করেন। দোয়া করেন- ‘হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের জন্য চোখজুড়ানো। আর আপনি আমাদেরকে করুন মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য।’ (সুরা ফুরকান: ৭৪)
নেককার বান্দাদের এই গুণাবলী কোনো অতিমানবিক ক্ষমতা নয়। এগুলো আল্লাহর সাহায্য ও নিয়মিত চেষ্টা, সততা ও দ্বীনের প্রতি আনুগত্যের ফল। প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই গুণগুলো নিজ জীবনে ধারণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর প্রিয় নেককার বান্দাদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।