images

ইসলাম

কেউ জাদু করেছে কি না বুঝবেন কীভাবে

ধর্ম ডেস্ক

২১ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম

ইসলামে জাদু (সিহর) একটি বাস্তব বিষয়, যা কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘তারা মানুষকে জাদু শেখায়... এবং তারা এমন কিছু শেখে, যা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। যদিও তারা কারো কোনো ক্ষতি করতে পারে না, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া।’ (সুরা বাকারা: ১০২)

এই আয়াত প্রমাণ করে যে জাদুর অস্তিত্ব বাস্তব এবং এটা আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কাজ করতে পারে না।

জাদুগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। তবে প্রতিটি সমস্যাকে জাদু বলা উচিত নয়। এখানে জাদুগ্রস্ত হওয়ার বৈশিষ্ট্য ও ইসলামিক সমাধান দেওয়া হলো।

জাদুগ্রস্ত হওয়ার ১০টি লক্ষণ

১. অস্বাভাবিক শারীরিক সমস্যা: হঠাৎ গুরুতর অসুস্থতা বা দুর্বলতা যা মেডিকেল টেস্টে ধরা পড়ে না। শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে ব্যথা বা অবশ ভাব (যেমন: পিঠ, কাঁধ, মাথা)।

২. অস্বস্তিকর স্বপ্ন: বারবার ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখা (যেমন: পশু, কালো ব্যক্তি, কবরস্থান)। ঘুমের মধ্যে চিৎকার করা বা শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি।

৩. মন-মেজাজের আকস্মিক পরিবর্তন: অকারণে রাগ, ভয় বা বিষণ্ণতা। পরিবারের সদস্যদের ওপর বিরক্ত বা ধর্মীয় কাজে বিরক্তি।

৪. অস্বাভাবিক আচরণ: নিজের অজান্তে অদ্ভুত শব্দ বা কথা বলা। ঘর-সংসার বা ইবাদতে অনিহা।

৫. বিবাহিত জীবনে সমস্যা: সহবাসে অনিচ্ছা বা যৌন অক্ষমতা (যদি শারীরিক কারণ না থাকে)। স্ত্রী-স্বামীর মধ্যে অস্বাভাবিক ঘৃণা বা দূরত্ব।

৬. ধর্মীয় কাজে বাধা: নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির করতে গেলে অস্বস্তি বা ভয় পাওয়া। মসজিদ বা ধর্মীয় স্থানে যেতে অনীহা।

৭. গৃহস্থালিতে অশান্তি: বাড়িতে প্রায়ই ঝগড়া বা দুর্ঘটনা ঘটা। পোকামাকড় বা প্রাণীর অস্বাভাবিক উপস্থিতি (যেমন: সাপ, কালো কুকুর)।

৮. অতিপ্রাকৃত ঘটনা: অদৃশ্য শব্দ শোনা বা ছায়া দেখা। জিনিসপত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিখোঁজ হওয়া বা স্থান পরিবর্তন করা।

৯. শারীরিক বিকৃতি: হঠাৎ চেহারা বা চুলের রং পরিবর্তন। শরীরে নীল বা কালো দাগ (যার চিকিৎসা নেই)।

১০. প্রতিকার কাজে প্রতিক্রিয়া: রুকইয়াহ (কোরআনিক চিকিৎসা) শুনলে মাথাব্যথা, বমি বা অস্থিরতা হওয়া।

আরও পড়ুন: রোগমুক্তিতে কার্যকর কোরআনের ৬ আয়াত

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

এই লক্ষণগুলো সবগুলো জাদুর প্রমাণ নয়। এগুলো মানসিক স্বাস্থ্য, চাপ, নেতিবাচক অভিজ্ঞতা কিংবা শারীরিক রোগ থেকেও হতে পারে। তাই আগে চিকিৎসক দ্বারা শারীরিক/মানসিক পরীক্ষা করান। ইসলামি স্কলার ড. বিলাল ফিলিপস তাঁর ‘জ্বিন ও জাদুর ইসলামিক পার্সপেক্টিভ’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ১১২) লিখেছেন- ‘৭০% ক্ষেত্রে জাদু বলে সন্দেহ করা সমস্যাগুলো আসলে মানসিক বা শারীরিক রোগ হয়।’

তাই সঠিক পরীক্ষার পর অভিজ্ঞ আলেম ও রুকইয়াহ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। মনে রাখবেন, জাদুর প্রভাব সত্য হলেও তা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কার্যকর হয় না।

জাদুর ইসলামিক সমাধান

১. রুকইয়াহ (কোরআনিক চিকিৎসা)
সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারা (আয়াত ১০২), সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দেওয়া। দিনে ৩ বার পড়ে রোগীর উপর বা পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করানো।

দোয়া ও জিকির
বেশি বেশি ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ ও ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়া। ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে হাতের উপর ফুঁ দিয়ে শরীরে মুছে নেওয়া।

আরও পড়ুন: বদনজর ও রুকইয়া: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও প্রতিকার

সাদাকাহ দেওয়া
গোপনে দান করা জাদুর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

হিজামা (কাপিং থেরাপি)
সুন্নাহ অনুযায়ী অভিজ্ঞ দ্বারা হিজামা করানো।

জাদুকর বা তান্ত্রিক এড়িয়ে চলা
জাদুর সমাধান হিসেবে জাদুকরের শরণাপন্ন হওয়া হারাম।

আল্লাহর ওপর ভরসা
যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তাঁর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।

পরামর্শ

জাদু সন্দেহ হলে নিজে নিজে পরীক্ষা না করে একজন অভিজ্ঞ, কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক রুকইয়া চর্চাকারীর সহায়তা নিন। অবিশ্বাস্য ঝাড়ফুঁক, কবিরাজি, তাবিজ বা তান্ত্রিক প্রতারকদের থেকে সতর্ক থাকুন। নিয়মিত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে নিজের ঈমানকে মজবুত করুন। আল্লাহই একমাত্র সাহায্যকারী।

সূত্র: সুরা বাকারা: ১০২; সুরা তালাক: ৩; সুরা আম্বিয়া: ৪৭; সহিহ বুখারি: ৫৭৪৭; তিরমিজি: ২৪৫৯; সহিহ মুসলিম: ২২০; আবু দাউদ: ৩৮৬১