ধর্ম ডেস্ক
১৮ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম
নবীজি (স.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ একটি মহিমান্বিত ইবাদত। এটি কেবল তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমই নয়, বরং এর সওয়াব ও ফজিলত অপরিসীম। দুনিয়া ও আখেরাতের সকল সমস্যা সমাধানে দরুদ শরিফ একটি কার্যকরী উপায়। বলা হয়, সকল কল্যাণ দরুদের মধ্যেই নিহিত।
হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর জিকিরের গুরুত্ব বর্ণনা করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করি। আমার দোয়ার কত অংশ আপনার জন্য নির্ধারণ করব?’ নবীজি (স.) বললেন, ‘তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী। তবে বেশি করলে ভালো।’ আমি বললাম, ‘চতুর্থাংশ?’ তিনি বললেন, ‘তোমার ইচ্ছা, তবে বেশি করলে উত্তম।’ এভাবে আমি অর্ধেক, দুই-তৃতীয়াংশ এবং শেষে পুরো দোয়াই দরুদের জন্য উৎসর্গ করার প্রস্তাব দিলে নবীজি (স.) বললেন, ‘তাহলে তোমার সব চাহিদা পূরণ হবে এবং গুনাহ মাফ হবে।’ (তিরমিজি: ২/৭২)
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি মরুভূমিতে ডাকাতদের হাতে আটকা পড়েন। তারা তার সব সম্পদ লুট করে নেয়। ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করতে থাকেন। হঠাৎ একদল অশ্বারোহী এসে ডাকাতদের তাড়িয়ে দেয়। তারা বলেন, ‘তুমি যখন নবীজির উপর দরুদ পাঠ করছিলে, আল্লাহ আমাদেরকে তোমার সাহায্যে পাঠিয়েছেন।’ (কিতাবুশ-শিফা: ২/৬০২)
আরও পড়ুন: জুমার দিনসহ ৫ সময়ে দরুদ পড়ার নির্দেশনা
হজরত উসমান ইবনে হানিফ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক অন্ধ ব্যক্তি নবীজি (স.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার দৃষ্টি ফিরে পেতে কী করব?’ নবীজি (স.) তাকে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে এই দোয়া করতে বললেন- ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়াশফি'নি’ (হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (স.)-এর ওসিলায় আমাকে শিফা দান করুন)। ব্যক্তি আমল করলেন এবং অল্প দিনেই তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। (তিরমিজি: ৩৫৭৮)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নবীজি (স.)-এর কাছে তার ঋণের কষ্টের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করো, আল্লাহ ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করবেন।’ ব্যক্তিটি তা পালন করলে অচিরেই তার ঋণ পরিশোধ হয়ে যায়। (দারেমি: ২৭৫৫)
ইমাম ইবনে জাওজি (রহ.) তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, এক দরিদ্র ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০০ বার দরুদ পাঠ শুরু করে। কিছুদিন পরেই তার রিজিকের দ্বার খুলে যায় এবং সে ধনী হয়ে গরিবদের সাহায্য করতে শুরু করে। (কিতাবুল আওরাদ: ২৯৭)
হজরত আবু ইয়াজিদ (রহ.) বলেন, এক আলেমের কাছ থেকে শুনে তিনি প্রতিদিন ১০০০ বার দরুদ পাঠ শুরু করেন। এক রাতে স্বপ্নে নবীজি (স.) তাকে বলেন, ‘তুমি দরুদ পাঠ অব্যাহত রাখো, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তোমাকে সম্মানিত করবেন।’ (তাফসির কুরতুবি: ১০/৫৬)
আরও পড়ুন: হাদিসে বর্ণিত ছোট ১০ দরুদ
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে প্রতিদিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার কবরের আজাব মাফ করবেন এবং জান্নাতের সুসংবাদ দেবেন।’ (মুয়াত্তা মালিক: ৪৮৮)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) এক ব্যক্তির ঘটনা উল্লেখ করেন, যিনি নিয়মিত দরুদ পাঠ করতেন, মৃত্যুর সময় তিনি নবীজি (স.)-কে স্বপ্নে দেখে জান্নাতের সুসংবাদ পান। (তাফসির কুরতুবি: ১০/৫৬)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এক বৃদ্ধ মৃত্যুশয্যায় বলছিলেন, ‘নবীজি (স.) এসে আমাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।’ কারণ তিনি জীবনে কখনও নামাজ ছাড়েননি এবং প্রতিদিন ৫০০ বার দরুদ পাঠ করতেন। (রুহুল বায়ান: ৬/৩৭৮)
দরুদ শরিফের ফজিলত ও বরকত অপরিসীম। এটি দুনিয়ার সমস্যা সমাধান, রিজিক বৃদ্ধি, রোগমুক্তি, ঋণমুক্তি এবং আখেরাতে উচ্চ মর্যাদা লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাই প্রতিদিন নিয়মিত দরুদ পাঠের অভ্যাস গঠন করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।