ধর্ম ডেস্ক
১৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম
ইসলামি শরিয়তে সামুদ্রিক খাদ্য সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে হানাফি মাজহাবে চিংড়িকে জায়েজ ও কাঁকড়াকে নাজায়েজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহ, ফুকাহায়ে কেরামের মতামত এবং আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হলো।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য সামুদ্রিক শিকার ও তা ভক্ষণ হালাল করা হয়েছে।’ (সুরা মায়েদা: ৯৬)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণী হালাল।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৮৩)
চিংড়ি মাছের সংজ্ঞায় পড়ে: চিংড়ি শুধু পানিতেই বসবাস করে, ফুলকার সাহায্যে শ্বাস নেয় এবং মাছের সাধারণ বৈশিষ্ট্য বহন করে। ইমাম সারাখসি (রহ.) বলেন, ‘চিংড়ি মাছের অন্তর্ভুক্ত।’ (আল মাবসুত: ১১/২৩৫) মুফতি তাকি উসমানি বলেন, ‘চিংড়ি মাছ হিসেবেই স্বীকৃত।’ (ফতোয়া উসমানি: ৩/৪১২)
আরও পড়ুন: ইসলামে হারাম খাবার: কারণ ও দলিলভিত্তিক বিশ্লেষণ
কিন্তু কাঁকড়া মাছ নয়: ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘কাঁকড়া মাছের সংজ্ঞায় পড়ে না’। ইবনে আবিদিন (রহ.) বলেন, ‘জলজ প্রাণীর মধ্যে শুধু মাছ হালাল।’ (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩০৬)
তাছাড়া হানাফি ইমামদের মতে, কাঁকড়া খাবায়েস (নিকৃষ্ট বস্তু) এর অন্তর্ভুক্ত। আর কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি তাদের জন্য নিকৃষ্ট বস্তুসমূহ হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ: ১৫৭) ইমাম কাসানি (রহ.) বলেন, ‘মানুষ স্বভাবত যা ঘৃণা করে তা নাজায়েজ।’ (বাদায়িউস সানায়ে: ৫/৩৫)
কাঁকড়া স্থল ও জল উভয় স্থানে বাঁচতে পারে, সাধারণ মাছের গঠন নেই এবং বিশেষ শ্বাসযন্ত্র রয়েছে। কিন্তু চিংড়ি শুধু পানিতেই বাস করে এবং মাছের সংজ্ঞায় পড়ে। তাই হানাফি ফকিহদের অভিমত হলো- ‘পানির প্রাণীর মধ্যে শুধু মাছ খাওয়া জায়েজ। অর্থাৎ জলজ প্রাণী থেকে শুধু মাছ হালাল; অন্যকিছু নয়। (হিদায়া: ৪/৪৪২; তাবয়িনুল হাকায়েক: ৬/৪৬৯; রদ্দুল মুহতার: ৯/৪৪১)
আরও পড়ুন: জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম না নিলে গোশত খাওয়া জায়েজ?
হানাফি মাজহাব কোরআনের ‘খাবায়েস’ ধারণাকে প্রাধান্য দেয়। তাই কাঁকড়াকে খাওয়ার উপযুক্ত মনে করে না। কিন্তু অন্যান্য মাজহাব ‘সমুদ্রের প্রাণী’ ধারণাকে সাধারণ অর্থে গ্রহণ করে; তাই কাঁকড়া তাদের মতে হালাল।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে হালাল প্রাণীর গোশত হারাম হয়ে যায়
হানাফি মাজহাবের অনুসারীরা চিংড়ি খাবেন, কিন্তু কাঁকড়া থেকে বিরত থাকবেন। অন্যান্য মাজহাব অনুসারীরা উভয়ই খেতে পারেন, তবে পবিত্র ও স্বাস্থ্যকর বিষয়টি খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।
মূলত মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো- শরিয়তের সীমারেখা মেনে চলা এবং ইজতেহাদি বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে নিজ নিজ ইমামকে অনুসরণ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হালাল রিজিক দান করুন। আমিন।