ধর্ম ডেস্ক
১৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম
আপনজন হারানো মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন—একটু সান্ত্বনা, সহমর্মিতা ও আশার বাণী। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এই কষ্টবোধকে গভীরভাবে বুঝতেন। তাই তিনি শোকার্ত পরিবারকে প্রথমেই সান্ত্বনা দিতেন, ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করতেন এবং প্রয়োজনে তাঁদের পাশে থেকে সেবা করতেন। সাহাবিদেরকেও এভাবে শোকাহতদের পাশে দাঁড়াতে শিক্ষা দিতেন।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কারো ওপর বিপদ এলে সে যদি বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজুরনি ফি মুসিবাতি ওয়াখলিফলি খাইরাম-মিনহা’—আল্লাহ তার বিপদকে কল্যাণে পরিণত করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২১৬৬)
নবীজি (স.) শুধু মুখের কথা নয়, বরং কার্যকর সহানুভূতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেন। জাফর (রা.)-এর শাহাদাতের পর তিনি বলেন, ‘জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করো, কেননা তাদের কাছে এমন দুঃসংবাদ এসেছে যা তাদের ব্যস্ত করে রাখবে।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৩১৩২)
আরও পড়ুন: সৃষ্টিজগতের সবকিছু যেভাবে ভালোবাসত নবীজিকে
প্রিয়জন হারিয়ে কেউ কাঁদলে নবীজি (স.) নিষেধ করতেন না। উহুদের যুদ্ধে জাবির (রা.)-এর পিতা শহিদ হলে তিনি কাঁদছিলেন। লোকজন বাধা দিতে চাইলে নবীজি (স.) তা করেননি। বরং বললেন, ‘তোমরা তাকে তুলে নেওয়া পর্যন্ত ফেরেশতারা তাঁদের ডানা দিয়ে ছায়া করে রেখেছে।’ (সহিহ বুখারি: ১২৪৪)
মৃতব্যক্তির মাগফেরাতের জন্য নবীজি (স.) নিজে দোয়া করতেন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করতেন। ‘তোমরা যখন কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়বে, নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করবে।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৩২০১)
দাফনের পর বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার মজবুত অবস্থানের জন্য দোয়া করো। এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৩২২১)
আরও পড়ুন: অপ্রীতিকর আচরণ যেভাবে মোকাবেলা করতেন নবীজি
সন্তানহারা নারীদের বিশেষভাবে সান্ত্বনা দিতেন নবীজি (স.)। তিনি বলতেন, ‘তিনটি সন্তান আগেই মারা গেলে, তারা মায়ের জন্য জাহান্নামের রক্ষাকবচ হবে।’ এক নারী বললেন, ‘দুটি হলে?” নবীজি (স.) বললেন, ‘দুটি হলেও।’ (সহিহ বুখারি: ১০১)
আরেকবার এক নারী তাঁর চতুর্থ সন্তান নিয়ে নবীজির কাছে এলে তিনি বলেন, ‘তুমি তো এক কঠিন প্রাচীর দ্বারা জাহান্নাম থেকে নিজেকে রক্ষা করেছ।’ (সুনানে নাসায়ি: ১৮৭৭)
নবীজি (স.) এমনও করেছেন যে, কোনো মুমিন ঋণ রেখে মারা গেলে তার দায়ভার নিজে নিয়েছেন। ‘মুমিনের কেউ ঋণ রেখে মারা গেলে, তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর যে সম্পদ রেখে যাবে, তা তার ওয়ারিশ পাবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৩৭১)
নবীজির (স.) জীবন আমাদের শেখায়—শোকাহত মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুধু মানবতা নয়, বরং নববী আদর্শের অনুসরণ। আমরা যদি তাঁর মতো করে প্রিয়জন হারানোদের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, তবে তা হবে এক মহৎ সুন্নাহর বাস্তবায়ন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নবীজি (স.)-এর এই মহান আখলাক অনুসরণ করার তাওফিক দিন। আমিন।