সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অপ্রীতিকর আচরণ যেভাবে মোকাবেলা করতেন নবীজি 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

অপ্রীতিকর আচরণ যেভাবে মোকাবেলা করতেন নবীজি 

সুন্দর আচরণের উৎসাহ দেয় ইসলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ আচার-আচরণে সবসময় স্বাভাবিক থাকতে পারে না। খুব ভদ্র মানুষটিও কখনও অভদ্র বা বেপরোয়া আচরণ করে বসেন। এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়েনি—এমন মানুষ নেই বললেই চলে। খোদ বিশ্বনবী (স.)-ও মানুষের অশোভন আচরণের শিকার হতেন। তখন তা সর্বোত্তম উপায়ে মোকাবেলা করার দৃষ্টান্ত দেখা যায় প্রিয়নবীজির পবিত্র জীবনে। আর এটাই উম্মতের জন্য সুন্নত।

মানুষের অশোভন আচরণে যা করতেন নবীজি
কেউ অশোভন আচরণ করলে কষ্ট ও বিরক্তি প্রকাশ ছাড়াই উপেক্ষা করে যেতেন প্রিয়নবী (স.)। এটাকে বলা হয় সুন্দর উপেক্ষা। নবীজির বৈশিষ্ট্য ছিল মানুষকে ক্ষমা করা, সবর করা, প্রতিশোধমূলক আচরণ না করা ও মানুষের স্বভাবগত ত্রুটিগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া। এখানে অবশ্য গুরুতর অপরাধের কথা বলা হচ্ছে না, বরং এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোর কথা বলা হচ্ছে, যেসব বিষয়ে নবীজির এই গুণ ও বৈশিষ্ট্যের চর্চা আমাদের করতে হয় এবং যা একটি ভ্রাতৃত্বমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয়।


বিজ্ঞাপন


দাম্পত্য জীবন ও সামাজিক জীবনে, বন্ধুদের পক্ষ হতে কিংবা শত্রুদের পক্ষ হতে কত অবাঞ্ছিত, অপ্রীতিকর বিষয়েরই না মুখোমুখী হয়েছেন নবীজি। হাদিস শরিফে বেদুঈন লোকদের রুক্ষতা অম্লান বদনে সহ্য করার অসাধারণ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি নবী (স.)-এর সাথে হাঁটছিলাম। তাঁর পরনে ছিল একটি নাজরানি (ইয়েমেনি) চাদর, মোটা পাড়বিশিষ্ট। এক বেদুঈন তার কাছে এসে সেই চাদর ধরে সজোরে টান দিল। আমি দেখলাম মোটা পাড়ের ঘষায় নবী (স.)-এর কাঁধে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশস্বরে তাঁকে বলল- ‘আল্লাহর যে মাল তোমার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বল!’ নবী (স.) লোকটির দিকে ফিরে তাকালেন এবং মুচকি হাসলেন এরপর তাকে কিছু দেয়ার আদেশ করলেন। (সহিহ বুখারি: ৩১৪৯)

আরও পড়ুন: উম্মতের মুক্তির জন্য নবীজির কান্না

নবীজির ক্ষমাসুন্দর মন ও উত্তম আচরণ সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন- ‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি বিনম্র থেকেছেন। আপনি যদি কর্কশ ও কঠোর মনের হতেন তাহলে এরা সকলে আপনার চারপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন, তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন এবং (বিশেষ বিশেষ ব্যাপারে) তাদের পরামর্শ নিতে থাকুন। এরপর যখন আপনি কৃতসংকল্প হন তখন আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন ভরসাকারীদের ভালবাসেন। (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)

ক্ষমা ও সবরের প্রশিক্ষণে উম্মতের করণীয়
মানুষ অশোভন আচরণ করলে নবীজি যেভাবে উপেক্ষা করতেন এবং সবর করতেন, সেটাই মুমিনের করণীয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর জন্য বিশেষ শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু কল্যাণময় ও সাফল্যময় জীবনের জন্য এই গুণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। তাই এই গুণের চর্চা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- وَ لَمَنْ صَبَرَ وَ غَفَرَ اِنَّ ذٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ ‘আর যে সবর করে ও ক্ষমা করে নিশ্চয়ই তা অতি আবশ্যকীয় বিষয়।’ (সুরা শুরা: ৪৩)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন

মানুষের এ ধরনের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা ও ক্ষমা করা বড় ফজিলতের কাজ। মূলত যে অন্যকে ক্ষমা করে, অন্যের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে আল্লাহ তাআলাও তাকে ক্ষমা করেন ও তার দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করেন। ইসলামি বিশ্বাসমতে, তুমি যদি ক্ষমা পেতে চাও তাহলে অন্যকে ক্ষমা কর, দয়া পেতে চাইলে অন্যের উপর দয়া কর।

পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, তাদের উচিত ক্ষমা করা ও (ভুল-ভ্রান্তি) উপেক্ষা করা। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ত্রুটি ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বড় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা নুর: ২২)

খারাপ আচরণের জবাবে ভালো আচরণ ইসলামের শিক্ষা
অশোভন কথার জবাবে শোভন কথা, অপ্রীতিকর আচরণের জবাবে প্রীতিকর আচরণ; মানুষের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা ও মৃদু হেসে মন জয় করা ইসলামিক শিষ্টাচার। কর্ম ও আচরণের এই সুন্দর নীতির কারণে শত্রুতা তো কমবেই, চিরশত্রুও বন্ধুতে পরিণত হতে পারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘ভালো মন্দ একসমান নয়, তাই জবাবে ভালোকেই গ্রহণ করুন। তাহলে দেখবেন আপনার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে সেও আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। আর এই আদর্শ অনুসরণের সৌভাগ্য তাদেরই হয় যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান। (সুরা হা মিম সাজদা: ৩৪-৩৫)

আরও পড়ুন: ৪ আলামতে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উপরোক্ত আয়াতের নির্দেশ এই যে, তোমার প্রতি যে ব্যক্তি ক্রোধ প্রকাশ করে তুমি তার মোকাবেলায় সবর কর, যে তোমার সঙ্গে মূর্খতার আচরণ করে তুমি তার প্রতি সহনশীল হও, আর যে তোমাকে জ্বালাতন করে তুমি তাকে ক্ষমা কর। (তাফসিরে মাজহারি: ৮/২৯৬)

ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার সওয়াব
ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার প্রতিদান অনেক বড়। আল্লাহ বলেন, আর মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। অতঃপর যে ক্ষমা করে ও আপস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। (সুরা শুরা: ৪০) যে সকল বান্দাকে প্রথমবারেই জান্নাত দান করা হবে তাদের গুণাবলীর বর্ণনায় এসেছে- যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হলে ক্ষমা করে। (সুরা শুরা: ৩৮)

এভাবে প্রিয়নবীজির আদর্শ ধারণ করে এক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গড়ার আহ্বান জানিয়েছে পবিত্র কোরআন। এ আহ্বানে সাড়া দেওয়াই দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা ও সবরের গুণ দান করুন। নবীজির আদর্শ অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর