images

ইসলাম

জীবনের ব্যর্থতা দূর করতে যে আমল করবেন

ধর্ম ডেস্ক

১৫ জুলাই ২০২৫, ০২:৪২ পিএম

মানুষের জীবন চলার পথে সাফল্য ও ব্যর্থতা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে যারা ব্যর্থতায় থেমে যান না, তারা-ই সত্যিকার অর্থে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হন। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় ধৈর্য, পরিশ্রম এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখার মাধ্যমে আমরা যেকোনো ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারি। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ: ৫-৬)

ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রতিদিন কিছু আমল আছে, যা নিয়মিত করলে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করেন। ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে নিম্নলিখিত আমলগুলো নিয়মিত করুন, ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন।

১. ফজরের সালাত ও দোয়া

‘সালাত প্রতিষ্ঠা কর, নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)
‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) সালাত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (সহিহ মুসলিম: ৭২৫)
আমল: প্রতিদিন ফজরের সালাত সময়মতো আদায় করুন। ফজরের পর সুরা ইয়াসিন, সুরা ওয়াকেয়া এবং মাসনুদ দোয়াগুলো পড়ুন।

আরও পড়ুন: ফজর নামাজের ১০ পুরস্কার

২. সকাল-সন্ধ্যায় ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)

‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন।’ (সুরা নুহ: ১০-১২)
‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৬৭৭)
আমল: সকাল-সন্ধ্যায় ১০০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলুন। বিশেষভাবে এই দোয়াটি পড়ুন- ‘রাব্বিগফিরলী ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত-তাওয়াবুর রাহিম।’ (হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন ও আমার তাওবা কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।)

৩. দোয়া ইউনুস

‘অন্ধকারে (মাছের পেটে) ইউনুস (আ.) যখন ডাকলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, ইন্নী কুন্তু মিনায-যালিমীন’... তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুঃখ থেকে উদ্ধার করলাম।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭-৮৮)
সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে অবস্থানকালে ইউনুস (আ.) দোয়াটি পড়তেন। কোনো মুসলিম ব্যক্তি তা নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন।’ (তিরমিজি: ৩৫০৫) 
আমল: ব্যর্থতা বা সংকটের সময় ১০০ বার দোয়া ইউনুস পড়ুন।

৪. সুরা মুলক ও সুরা ওয়াকেয়া তেলাওয়াত

‘সুরা মুলক (সুরা ৬৭) এর সুপারিশে ক্ষমা করা হবে। (আবু দাউদ: ১৪০০; তিরমিজি: ২৮৯১) ‘যে ব্যক্তি প্রতিরাতে সুরা ওয়াকেয়া (সুরা ৫৬) পড়বে, তাকে কখনো দারিদ্র্য স্পর্শ করবে না।’ (বায়হাকি: ২৪৯৭, রুহুল মাআনি: ২/১২৮)
আমল: প্রতিরাতে সুরা মুলক পড়ুন। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ বার সুরা ওয়াকেয়া তেলাওয়াত করুন।

আরও পড়ুন: দুনিয়ার অভাবে ও আখেরাতের বিপদে সবচেয়ে কাজে আসবে যে ২ সুরা

৫. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা)

‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩)
‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ভরসা করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যেমন পাখিদের দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মেশকাত: ৫০৬৯)
আমল: প্রতিদিন সকালে ‘হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নিইমাল ওয়াকিল’ (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধানকারী!) বলুন।

৬. দরুদ

‘নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোয়া করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরুদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
দরুদ পাঠে মকসুদ হাসিল হয়, গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহ বিশেষ রহমত করেন। (তিরমিজি: ২/৭২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)
আমল: প্রতিদিন দরুদ পড়ুন। বিশেষ করে জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পড়ুন।

৭. রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ ও দোয়া

‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে। এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৭৯)
‘রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন- ‘কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫)
আমল: সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন তাহাজ্জুদ পড়ুন। দোয়া করুন- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মুজীবাতি রাহমাতিকা ওয়া আযাইমা মাগফিরাতিকা...’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতের বৃষ্টি ও ক্ষমার সুধা চাই...)

এই আমলগুলো নিয়মিত করুন, ইনশাআল্লাহ ব্যর্থতা দূর হয়ে সাফল্য আসবে। দুঃখ-হতাশা কমবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আল্লাহর রহমত ও বরকত জীবনে প্রকাশ পাবে। ‘আর আল্লাহর সাহায্য ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে চাও। নিশ্চয়ই সালাত কষ্টসাধ্য, কিন্তু বিনয়ী লোকদের জন্য তা সহজ।’ (সুরা বাকারা: ৪৫)