images

ইসলাম

রাতে কোন দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন

ধর্ম ডেস্ক

১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম

রাতের নীরবতা ও নির্জনতা হলো আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত। নবীজি (স.) বিভিন্ন হাদিসে রাতের ইবাদত ও দোয়ার ফজিলত বর্ণনা করেছেন, বিশেষ করে শেষ রাতের তাহাজ্জুদ, সেজদা ও ঘুমানোর আগের দোয়াকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আসুন জেনে নিই কোন দোয়া ও সময়ে আল্লাহ বান্দার প্রার্থনা কবুল করেন।

১. তাহাজ্জুদ নামাজের সময়ে দোয়া

রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন এবং বান্দার দোয়া কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার কাছে দোয়া করবে? আমি সাড়া দেব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫, সহিহ মুসলিম: ৭৫৮)

দোয়ার সময়: তাহাজ্জুদ পড়ার সময় বা শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে এই দোয়া পড়ে— لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللهِ وَلآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহা নাল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অর্থ: ‘এক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর ওপর শক্তিমান। সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ তাআলা পবিত্র, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোনো শক্তি নেই আল্লাহর তাওফিক ছাড়া।’ অতঃপর বলে, হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন বা (অন্য কোনো) দোয়া করে, তাঁর দোয়া কবুল হয়। অতঃপর অজু করে (নামাজ আদায় করলে) তার নামাজ কবুল হয়। (সহিহ বুখারি: ১১৫৪)

আরও পড়ুন: জিকির-দোয়ার কার্যকরী পদ্ধতি: কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক সম্পূর্ণ গাইড

২. সিজদায় গিয়ে দোয়া

সিজদা হলো বান্দার আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থা। এ সময় দোয়া কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা সিজদার সময় আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে থাকে, তাই সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৮২)

দোয়ার পদ্ধতি: নফল নামাজে দীর্ঘ সিজদা দিয়ে দোয়া করা।  নবীজি (স.) সেজদায় কখনো কখনো তাসবিহের সঙ্গে এ দোয়াটি পড়তেন— سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি। অর্থ: হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্‌! আমাকে ক্ষমা করে দিন। (বুখারি: ৭৬১; মুসলিম: ৪৮৪)

৩. ঘুমানোর আগের দোয়া

বিশেষ কিছু দোয়া রাতে ঘুমানোর আগে পড়লে আল্লাহ রক্ষা করেন এবং কবুল করেন। এক্ষেত্রে এই দোয়াটি পড়ুন- بِاسْمِكَ رَبِّي وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، فَإِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ অর্থ: ‘হে আমার রব! তোমার নামেই আমি আমার পাশ ফিরলাম (ঘুমালাম), আর তোমার নামেই আমি উঠব। যদি তুমি আমার রূহ কবজ করো, তবে তাকে ক্ষমা করো। আর যদি তুমি তাকে ছেড়ে দাও, তবে তোমার নেক বান্দাদের হেফাজতের মতো তাকে হেফাজত করো।’ (তিরমিজি: ৩৪০১)

আরও পড়ুন: আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় ৪ জিকির

৪. দুঃখ-কষ্টের সময় দোয়া

রাতে যদি কেউ দুঃখ, অসুস্থতা বা বিপদে পড়ে, তাহলে এই দোয়া পড়তে পারেন- اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার রহমতের আশা করি, আমাকে এক চোখের পলকের জন্যও আমার নিজের উপর ছেড়ে দিও না। আমার সব অবস্থা সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ (আবু দাউদ: ৫০০২)

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

  • দোয়ায় ইখলাস (আন্তরিকতা) থাকা জরুরি।
  • নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
  • দোয়ার আগে-পরে দরুদ পাঠ করা দোয়া কবুলের হাতিয়ার।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর কাছে খালিস দিলে দোয়া করার তাওফিক দিন। আমিন।