ধর্ম ডেস্ক
০১ জুলাই ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
ইবাদতের স্থান হলেও মসজিদ কেবলই চার দেয়ালের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একেকটি জীবন্ত ইতিহাস, একেকটি শিল্পকলা, আর একেকটি আত্মিক প্রশান্তির আধার। মুসলিম উম্মাহর হৃদয়জুড়ে মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববি যেমন পবিত্রতার শিখরে, তেমনি সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কিছু মসজিদ স্থাপত্য ও আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব সমন্বয়।
এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো মক্কা-মদিনার পর বিশ্বের সেই পাঁচটি মসজিদ, যেগুলো নয়নাভিরাম রূপ ও ইতিহাসের গৌরবে ইসলামি স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদ এটি। সাদা মার্বেল দিয়ে নির্মিত এই মসজিদটি ইসলামি, মোরোক্কান, আন্দালুসি ও মোঘল স্থাপত্যের এক অনন্য সমন্বয়।
স্থাপত্য: সাদা মার্বেল ও ৮২টি সোনার গম্বুজ
বিশেষত্ব: বিশ্বের বৃহত্তম হাতে বোনা কার্পেট (৫,৬২৭ বর্গমিটার)
ধারণক্ষমতা: ৪০,০০০ মুসল্লি
আকর্ষণ: রাতের নীল আলোকসজ্জা
দর্শনার্থী সংখ্যা: বছরে ১০ মিলিয়নের বেশি দর্শনার্থী

১৬০৯ সালে সুলতান আহমেদ নির্মাণ করেন এই স্থাপত্যকীর্তি। অভ্যন্তরে ব্যবহৃত নীল রঙের টাইলসের কারণে এটি “ব্লু মসজিদ” নামে পরিচিত।
স্থাপত্য: ৬ মিনারবিশিষ্ট অটোমান স্থাপত্য
বিশেষত্ব: ২০,০০০ নীল টাইলসে কোরআনের আয়াত
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: ১৬০৯ সালে নির্মিত
অবস্থান: ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত আয়া সোফিয়ার ঠিক বিপরীতে।

আরও পড়ুন: সুন্দর মসজিদ নির্মাণ কি কেয়ামতের আলামত?
স্থাপত্য: মোঘল স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন
নির্মাণ বছর: ১৬৭৩
বিশেষত্ব: ১০০,০০০ মুসল্লি ধারণক্ষমতা
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: ১৬৭৩ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব নির্মাণ করেন
আকর্ষণ: সূর্যাস্তের সময় লাল বেলেপাথরের রঙ

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্থাপনা মসজিদে হারাম
আধুনিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন এই মসজিদটি গোলাপি গ্রানাইটে নির্মিত, যা সূর্যালোকে মায়াবী আভা ছড়ায়। লেকপাড়ে অবস্থিত মসজিদটি মালয়, পার্সিয়ান ও মধ্যপ্রাচ্যীয় স্থাপত্যের অনন্য সংমিশ্রণ।
স্থাপত্য: গোলাপি গ্রানাইটের মালয়-মধ্যপ্রাচ্য ফিউজন
বিশেষত্ব: কৃত্রিম হ্রদের উপর অবস্থিত
ধারণক্ষমতা: ১৫,০০০ মুসল্লি
আধুনিক সুবিধা: ইসলামিক স্থাপত্য জাদুঘর
আকর্ষণ: সন্ধ্যার আলোকসজ্জা

সমুদ্রের পাশে নির্মিত এই মসজিদটি আফ্রিকার সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ মসজিদ।
প্রতিষ্ঠাতা: মরক্কোর রাজা হাসান II (১৯৯৩)
স্থাপত্য: আধুনিক মরোক্কান স্থাপত্য
বিশেষত্ব: আটলান্টিক মহাসাগরের উপর স্থাপিত
প্রযুক্তিগত বিস্ময়: স্বয়ংক্রিয় খোলা যায় এমন ছাদ
ধারণক্ষমতা: ১০৫,০০০ মুসল্লি

১. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, আবুধাবি
সময়সূচী: শনি-বৃহস্পতি: সকাল ৯টা–সন্ধ্যা ১০টা | শুক্র: বিকেল ৪:৩০–১১টা
পোশাক বিধি: পুরুষ: কাঁধ ও হাঁটু ঢাকা
মহিলা: হিজাব + ঢিলেঢালা পোশাক (প্রবেশদ্বারে বিনামূল্যে অ্যাবায়া পাওয়া যায়)
গাইডেড ট্যুর: প্রতিদিন সকাল ১০টা, ১১টা ও বিকেল ৫টা (আরবি/ইংরেজি)
ভিজিটের সেরা সময়: বিকেল ৪টা–সূর্যাস্ত (সোনালি আলোয় মার্বেলের ঝলক)
প্রবেশ ফি: বিনামূল্য, তবে অনলাইন বুকিং বাধ্যতামূলক: www.szgmc.ae
২. সুলতান আহমেদ মসজিদ (ব্লু মসজিদ), ইস্তাম্বুল
সময়সূচী: নামাজের সময় বাদে সকাল ৮:৩০–সন্ধ্যা ৬:৩০
পোশাক বিধি: মহিলাদের হেড স্কার্ফ বাধ্যতামূলক (প্রবেশদ্বারে বিনামূল্যে প্রদান)
টিপস: বসন্তে (এপ্রিল-মে) ভিড় কম
আয়া সোফিয়া থেকে ৫ মিনিটের পথ (একসাথে ভিজিট করুন)
বিশেষ নিয়ম: জুতা প্লাস্টিক ব্যাগে নিয়ে ভিতরে যেতে হয়
৩. বাদশাহী মসজিদ, লাহোর
সময়সূচী: প্রতিদিন সকাল ৮টা–সন্ধ্যা ৮টা
গাইড: স্থানীয় গাইড ৫০০-১০০০ পাকিস্তানি রুপিতে ভাড়া করা যায়
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান: লাহোর ফোর্ট (৫০০ মিটার)
শালিমার বাগান (৩ কিমি)
সেরা মৌসুম: নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি (তাপমাত্রা ১৫-২৫°C)
৪. পুত্রা মসজিদ, মালয়েশিয়া
সময়সূচী: শনি-বৃহস্পতি: সকাল ৯টা–সন্ধ্যা ৬টা | শুক্র: সকাল ৯টা–১১টা + দুপুর ২:৩০–৬টা
বোট রাইড: হ্রদে ৩০ মিনিটের রাইড ২০ MYR (প্রায় ৪০০ টাকা)
ইসলামিক জাদুঘর: প্রবেশ ফি ১০ MYR
সেরা সময়: সন্ধ্যা ৬-৭টা (আলোকসজ্জা)
৫. হাসান II মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা
অমুসলিম পর্যটকদের জন্য শর্ত: শুধুমাত্র নির্দেশিত গাইডেড ট্যুরে অংশগ্রহণ করতে পারবেন (প্রতি ১ ঘণ্টা পরপর ট্যুর শুরু হয়, কারণ, প্রতিটি ট্যুর সাধারণত ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা স্থায়ী হয়।)
টিকিট: ১৩০ মরোক্কান দিরহাম (প্রায় ১,১০০ টাকা)
সমুদ্রের দৃশ্য: ছাদ খোলা থাকে শুধু শুক্রবার বাদে
কাছের আকর্ষণ: কর্নিশে হাঁটার পথ (সূর্যাস্তের দৃশ্য)
ঐতিহ্যবাহী মিন্ট চা ঘর
আরও পড়ুন: মসজিদের আদব: আল্লাহর ঘরে নিষিদ্ধ ১১ কাজ
অনলাইন বুকিং: শেখ জায়েদ ও হাসান II মসজিদের জন্য আগে থেকে বুক করুন
স্থানীয় সংস্কৃতি: মরক্কোতে ট্যুর শেষে গাইডকে ১০% টিপ দিন। তুরস্কে মসজিদে প্রবেশের আগে জুতা খুলুন
ছবি তোলা: সব মসজিদেই অনুমতি সাপেক্ষে ছবি তোলা যায়। তবে, নামাজরত মুসল্লিদের ছবি তোলা নিষেধ
১. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, আবুধাবি
Google Map-এ দেখুন
২. সুলতান আহমেদ মসজিদ (ব্লু মসজিদ), ইস্তাম্বুল
Google Map-এ দেখুন
৩. বাদশাহী মসজিদ, লাহোর
Google Map-এ দেখুন
৪. পুত্রা মসজিদ, মালয়েশিয়া
Google Map-এ দেখুন
৫. হাসান II মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা
Google Map-এ দেখুন
ইসলামের ইতিহাসে মসজিদ কেবল ইবাদতের স্থানই নয়, বরং সভ্যতার বাতিঘর; জ্ঞানচর্চা, ঐক্য, সংস্কৃতি ও কল্যাণের কেন্দ্রবিন্দু। উপরের এই পাঁচটি মসজিদ—স্থাপত্যশৈলী, আধ্যাত্মিক আবেদন ও বৈশ্বিক খ্যাতির দিক থেকে—মক্কা ও মদিনার বাইরে মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম স্থাপনাগুলোর অন্যতম।