images

ইসলাম

আশুরার যে ৩ আমলে রয়েছে অগণিত সওয়াবের বার্তা

ধর্ম ডেস্ক

৩০ জুন ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম

ইসলামের ইতিহাসে মহররমের ১০ তারিখ, যা আশুরা নামে পরিচিত—একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ দিন। বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই দিনকে ঘিরে মুসলিম সমাজে নানা রকম আমল, বিশ্বাস ও চর্চা প্রচলিত। কিন্তু সব আমল হাদিসভিত্তিক নয়। এ কারণে সুন্নাহসম্মত নির্ভরযোগ্য আমলগুলো জানা এবং সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা একান্ত প্রয়োজন।

আসুন জেনে নিই আশুরার ৩টি হাদিসসমর্থিত গুরুত্বপূর্ণ আমল, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও অগণিত সওয়াব অর্জন করা সম্ভব।

১. আশুরার রোজা রাখা

আশুরার দিন রোজা রাখা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তবে শুধু ১০ তারিখ নয়, বরং ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মিলিয়ে দুই দিন রোজা রাখা বেশি ফজিলতপূর্ণ। 

হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) (রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে) আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১১২৮)

ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (স.) আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্ব দিতেন, অন্যকোনো রোজা সম্পর্কে তাঁকে তেমন গুরুত্ব দিতে দেখিনি।’ (বুখারি: ২০০৬; মুসলিম: ১১৩২)

আরও পড়ুন: পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই

২. পরিবারের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করা

আশুরার দিন পরিবারের সদস্যদের জন্য সাধ্যানুযায়ী ভালো খাবারের আয়োজন করাও একটি সম্মানিত আমল হিসেবে বিবেচিত।

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারাবছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির: ১০০০৭; বায়হাকি: ৩৭৯৫)

যদিও এই হাদিসের সনদে কিছু দুর্বলতা আছে, অনেক মুহাদ্দিস এটিকে ‘হাসান লিগাইরিহি’ (অন্য সূত্রে শক্তিশালী হয়ে ওঠা) হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অতএব, আমল করার সুযোগ রয়েছে।

৩. আহলে বাইতের জন্য দোয়া ও দরুদ পাঠ

আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা, তাঁদের জন্য দোয়া ও দরুদ পাঠ ইসলামি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আশুরার দিন কারবালার ঘটনার কারণে নবী পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করা যুক্তিসঙ্গত ও গুরুত্বপূর্ণ আমল।

দোয়ার মাধ্যমে তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জ্ঞাপন করা যেমন উত্তম আমল, তেমনি তাঁদের আদর্শ অনুসরণের শিক্ষা গ্রহণ করাও অতীব জরুরি।

আরও পড়ুন: মহররম মাসের আমল কয়টি?

যেসব আমলের ভিত্তি নেই

  • আশুরাকে শুধুমাত্র ‘কারবালার শোক দিবস’ হিসেবে পালন করা।
  • নিজ দেহে আঘাত করে মাতম করা।
  • কোনো নির্দিষ্ট খাবারকে আশুরার খাবার মনে করা।
  • বিশেষ রকমের মিছিল বা শোকানুষ্ঠান করা।

এ ধরনের অনেক কুসংস্কার আশুরার প্রকৃত মাহাত্ম্যকে ম্লান করে দেয়। অথচ এই দিনের ফজিলত বহু পূর্ব থেকেই ছিল; কারবালার ঘটনারও আগে।

আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগেও কুরাইশরা জাহেলি আমলে আশুরার রোজা রাখত। রাসুল (স.) নিজেও মক্কা জীবনে আশুরার রোজা রাখতেন। পরে মদিনায় এসে তিনি রোজা রাখার উৎসাহ দেন, এরপর রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ২৬৩২)

কারবালার ঘটনা আশুরার প্রেক্ষাপটে যুক্ত হয়েছে নবীজির ওফাতের প্রায় ৫০ বছর পর, ৬১ হিজরিতে। তাই আশুরাকে শুধুমাত্র কারবালার ঘটনা দিয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে, এটিকে একটি ইবাদতময় ও সুন্নাহভিত্তিক দিন হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের আশুরার প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবনের তাওফিক দেন এবং এই দিনে রোজা, দোয়া ও সুন্নাহসম্মত আমলগুলো যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দেন। আমিন।