হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব। রাসুলুল্লাহ (স.) এই মাসকে আল্লাহর মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অনেকেই জানেন না, মহররম মাসে কী কী আমল করা যায় বা করা উচিত। কোরআন-হাদিস বিশ্লেষণে মহররম মাসে যেসব আমল করা উত্তম, তার মধ্যে চারটি উল্লেখযোগ্য আমল পাওয়া যায়।
১. নতুন বছরের শুরুতে চাঁদ দেখে বিশেষ দোয়া
হিজরি নতুন বছর শুরু হয় মহররমের চাঁদ দিয়ে। রাসুলুল্লাহ (স.) নতুন চাঁদ দেখলে একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন- اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلامَةِ وَالْإِسْلامِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহূ আলায়না বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি রাব্বী ওয়া রাব্বুকাল্লাহু’। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদ নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় করুন। (হে চাঁদ!) আমার রব ও তোমার রব এক আল্লাহ। (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫১)
অন্য আরেকটি দোয়াও পড়া যায়- اللّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ وَالِإيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالإِسْلَامِ وَجِوَارٍ مِنَ الشَّيطَانِ وَرِضوَانٍ مِنَ الرَّحْمنِ অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মাঝে এ মাস/বছরের আগমন ঘটান- শান্তি ও নিরাপত্তা এবং ঈমান ও ইসলামের (উপর অবিচলতার) সাথে; শয়তান থেকে সুরক্ষা ও দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে। (মুজামুস সাহাবাহ: ৩/৫৪৩, বর্ণনা ১৫৩৯; আলইসাবাহ: ৪/২৫৬)
আরও পড়ুন: মহররম মাসে করণীয় ও বর্জনীয়
২. মহররম মাসে নফল রোজা
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩)
অতএব, মহররম মাসজুড়ে নফল রোজা রাখা অনেক ফজিলতের কাজ।
৩. তাওবা ও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন
এক হাদিসে এসেছে- ‘এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহ অতীতে অনেকের তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।’ (তিরমিজি: ৭৪১)
মুহাদ্দিসগণ বলেন, এই দিনটি হচ্ছে আশুরার দিন (১০ মহররম)। তাই এ মাসে আল্লাহর দরবারে কৃত গোনাহর জন্য তাওবা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল।
আরও পড়ুন: কারবালার মাসে বিয়ে করা কি ঠিক? ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি জানুন
৪. আশুরার রোজা (১০ মহররম)
মহররমের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। এই দিন রোজা রাখা অন্যতম ফজিলতপূর্ণ আমল। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
তবে শুধু ১০ তারিখ নয়, ইহুদিদের সাথে সাদৃশ্য এড়াতে নবীজি ৯ তারিখ বা ১১ তারিখে অতিরিক্ত একটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ৯ এবং ১০ তারিখ রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করো।’ (তিরমিজি: ৭৫৫)
মহররম মাসে এসব আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য উত্তম। তবে এসব আমল হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, তাই এর বাইরে কোনো বিদআতি কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

