ধর্ম ডেস্ক
২০ জুন ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর দরুদ পাঠ ইসলামি শিক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় ইবাদত। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদাররা! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করো।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
আমাদের ওপর নবীজির উপকার অগণিত। তাঁর মাধ্যমেই আমরা ইসলাম পেয়েছি। তাই তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করা শুধুই ইবাদত নয়, বরং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম উপায়। হাদিসে এসেছে— ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১/১৬৬)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন— ‘যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং ১০টি দরজা বুলন্দ হবে।’ (নাসায়ি: ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ: ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২/৪৩)
আরও পড়ুন: কোরআনে বর্ণিত গুনাহ মাফের ১১ দোয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন— ‘আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪০; ইবনে মাজাহ: ৯০৭)
উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, নবীজি (স.) তাকে পরামর্শ দেন যেন দোয়ার পুরোটা দরুদে ব্যয় করেন। এতে গুনাহ মাফ হবে, মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে। (তিরমিজি: ২/৭২) মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। (তিরমিজি: ১/১১০)
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই সে যেন দোয়ায় বলে- اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَ رَسُوْلِكَ وَ صَلِّ عَلَى الْمُؤمِنيْنَ وَالْمُؤمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ওয়া সাল্লে আলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাত, ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত’ এটি তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩/১৮৫)
আরও পড়ুন: আল্লাহর কাছে গরিব-দুঃখীর মর্যাদা
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে চায় আমাদের ওপর অর্থাৎ আহলে বাইতের ওপর দরুদ পাঠের সময় তাকে পাত্র ভরে দেওয়া হোক, সে যেন এভাবে দরুদ পড়ে- اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন্নাবিয়্যি ওয়া আজওয়াজিহি উম্মাহাতিল মু’মিনীনা ওয়াজুররিয়্যাতিহি ওয়া আহলে বাইতিহি কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’ (আবু দাউদ: ১/১৪১)
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (স.) উপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মাঝে থেমে থাকবে।’ (জামে তিরমিজি: ১/১১০)
নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ শুধু একটি আমল নয়—এটি একজন আশেকে রাসুলের আবেগ, দায়িত্ব, ও ভালোবাসার প্রকাশ। নবীজি উম্মতের জন্য নিজের আরাম ত্যাগ করেছেন, তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষণ উম্মতের মুক্তির জন্য উৎসর্গ করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি দরুদ পাঠের তাওফিক দিন এবং নবীজির (স.) শাফায়াত নসিব করুন। আমিন।