ধর্ম ডেস্ক
০৬ জুন ২০২৫, ০২:২০ পিএম
ঈদুল আজহার মহত্ত্ব কেবল কোরবানি দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কোরবানির পশুকে যত্ন ও দয়ার সঙ্গে লালন-পালন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (স.) কোরবানির জন্য কেনা পশুর প্রতি সদয় হওয়ার জোর তাগিদ দিয়েছেন। যারা কোরবানির আগের সময়টা প্রাণীর সেবায় অতিবাহিত করেন, তাদের জন্য রয়েছে অপার সওয়াব ও ফজিলতের ঘোষণা।
ইসলামের দৃষ্টিতে পশু আল্লাহর সৃষ্টি, যার সেবা করাও এক ধরনের ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের ওপর উত্তম আচরণ ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে, দয়ার্দ্রতার সঙ্গে হত্যা করবে। আর যখন জবাই করবে তখন দয়ার সঙ্গে জবাই করবে। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং তার জবাইকৃত জন্তুকে কষ্টে না ফেলে।’ (মুসলিম: ১৯৫৫: নাসাঈ: ৪৪১১; মেশকাত: ৪০৭৩)
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট, কোরবানি কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ে ছুরি চালানোর কাজ নয়, বরং তার আগের প্রতিটি মুহূর্তে পশুর দেখভাল করাও আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজ।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর যেসব ত্রুটি গ্রহণযোগ্য নয়
যে ব্যক্তি প্রাণীর প্রতি দয়া করে, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন। কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে ক্ষমা লাভের উদাহরণ রয়েছে হাদিসে। সাহাবিরা আল্লাহর রাসুলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল, চতুষ্পদ জন্তুর উপকারের জন্য কি আমরা প্রতিদান পাব? তিনি বলেন, ‘সব প্রাণীর উপকার করলে প্রতিদান রয়েছে।’ (বুখারি: ২৩৬৩)
কোরবানির পশু যদি খেতে না পায়, রোদে-বর্ষায় ভিজে থাকে, অসুস্থ হয়ে পড়ে—তাহলে শুধু পশু নয়, মালিকও গুনাহগার হতে পারে। হাদিসে এসেছে, একটি বিড়ালকে না খাইয়ে বন্দি করার কারণে এক নারীর জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছিল। (বুখারি: ৩৪৮২)
আরও পড়ুন: কোরবানির পশু নিজে জবাই করার ফজিলত
অতএব, পশুর জন্য প্রতিদিন যথাযথ খাবার, ঠাণ্ডা পানি ও ছায়াযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা মুমিনের দায়িত্ব। ইমাম নববি (রহ) বলেন, ‘জবেহ করার আগে পশুকে না খাইয়ে রাখা, বেশি দূরে হাঁটিয়ে আনা কিংবা এক পশুর সামনে অন্যকে জবেহ করা নিষিদ্ধ ও অমানবিক কাজ।’ (শরহ মুসলিম, ইমাম নববি, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ১০৫)
কোরবানির পশু যতক্ষণ জীবিত থাকে, ততক্ষণ তার জীবনের দায়িত্ব থাকে মালিকের হাতে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা কেবল দয়া নয়, বরং একটি ইবাদত, যার ফজিলত অনেক বড়। তাই ঈদের আগের দিনগুলোতেও যেন আমরা পশুকে অবহেলা না করি, বরং ভালোভাবে তার দেখভাল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।