images

ইসলাম

ইসলামি শরিয়তে আন্দোলনের পথনির্দেশনা

ধর্ম ডেস্ক

২০ মে ২০২৫, ০৩:২৪ পিএম

ইসলাম কেবল একটি ধর্মীয় বিশ্বাস নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এই জীবনব্যবস্থার সামাজিক রূপায়নের অন্যতম মাধ্যম হলো ইসলামি আন্দোলন। তবে এ আন্দোলন কেমন হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে—তা নির্ধারণ করেছে কোরআন ও হাদিস; এক কথায় সুন্নাহ। ইসলামি শরিয়তের আলোকে আন্দোলনের প্রকৃতি, পদ্ধতি ও কৌশল কী হওয়া উচিত—তা বিশ্লেষণ করল ঢাকা মেইল ডট কম।

আন্দোলনের মূল লক্ষ্য: তাওহিদ প্রতিষ্ঠা

ইসলামি আন্দোলনের সূচনা হয় আল্লাহর একত্ববাদের আহ্বান দিয়ে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আমি প্রত্যেক জাতির উদ্দেশে একজন রাসুল প্রেরণ করেছি (এই বার্তা দিয়ে) যে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে দূরে থাকো।’ (সুরা নাহল: ৩৬)

এই আয়াত প্রমাণ করে, সমাজ পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হলো মানুষকে আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা।

শান্তিপূর্ণ ও হিকমাহপূর্ণ দাওয়াহ

ইসলামি আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শান্তিপূর্ণ পন্থা ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন দাওয়াহ। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো হিকমাহ ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়।’ (সরা নাহল: ১২৫)

এই নির্দেশনা অনুসারে হিংসা, গালিগালাজ, বা রক্তপাত নয়—বরং সুন্দর চরিত্র ও যুক্তিনির্ভর কথাই হবে ইসলামি আন্দোলনের হাতিয়ার।

আরও পড়ুন: নবীজির যুগে অপরাধীদের যেভাবে গ্রেফতার করা হত

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মডেল: ধৈর্য ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা

মক্কা যুগে রাসুলুল্লাহ (স.) দীর্ঘ ১৩ বছর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পরিচালনা করেছেন, কোনো প্রকার জবরদস্তি ছাড়াই। ধৈর্য ও সংযম ছিল তাঁর অন্যতম কৌশল। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আপনি ধৈর্য ধরুন, আর আপনার ধৈর্য তো আল্লাহর সাহায্যেই।’ (সুরা নাহল: ১২৭)

চরিত্রই আন্দোলনের প্রাণ

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘আমি তো প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্র পরিপূর্ণ করতে।’ (সহিহ বুখারি, আদাবুল মুফরাদ: ২৭৩)

সুতরাং, ইসলামি আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্মীদের ব্যক্তিত্ব হতে হবে নিঃস্বার্থ, বিশ্বস্ত ও নম্র।

সশস্ত্র প্রতিরোধ নয়, বরং শর্তসাপেক্ষ আত্মরক্ষা

ইসলামে সশস্ত্র প্রতিরোধের অনুমতি রয়েছে নির্দিষ্ট শর্তে—যেমন মুসলিমদের উপর জুলুম হলে আত্মরক্ষার জন্য। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘যারা যুদ্ধের শিকার হচ্ছে, তাদেরকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে; কারণ তাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে।’ (সুরা হজ: ৩৯)

তবে রাসুল (স.) মক্কা যুগে এই অনুমতি পাননি—এ থেকেই বোঝা যায়, পরিস্থিতির বিবেচনায় ধৈর্যই ছিল প্রাথমিক কৌশল।

আরও পড়ুন: ‘ইসলামে প্রমাণ ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া দূরের কথা, সন্দেহ করাটাই অপরাধ’

বিশৃঙ্খলা নয়, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা

পবিত্র কোরআন স্পষ্টভাবে বলে, ‘ফিতনা তো হত্যা অপেক্ষাও গুরুতর।’ (সুরা বাকারা: ১৯১)

এ থেকে বোঝা যায়, যেকোনো বিশৃঙ্খল, উগ্র, বা সহিংস কর্মসূচি শরিয়তের পরিপন্থী।

তাওয়াক্কুল ও সুসংগঠিত কাঠামো অপরিহার্য

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি ঈমানদার হও, তবে আল্লাহর উপরই ভরসা করো।’ (সুরা মায়িদা: ২৩) সাথে প্রয়োজন নেতৃত্ব, পরামর্শ ভিত্তিক শূরা ব্যবস্থা এবং সুশৃঙ্খল দাওয়াহ কাঠামো। 

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আন্দোলন শুধু স্লোগান নয়; বরং এটি হৃদয় পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি কাজ। রাসুল (স.) মক্কায় ইসলামের শত্রুদের হৃদয় জয় করে ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।’

ইসলামি আন্দোলন কোনো উগ্রতা নয়—এটি হলো সত্যের শান্তিপূর্ণ দাওয়াহ, নৈতিক বিপ্লব, এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের সংগ্রাম। ইসলামের দৃষ্টিতে এই আন্দোলন হতে হবে কোরআন-হাদিসনির্ভর, হিকমাহ বা প্রজ্ঞাসম্পন্ন, অহিংস ও শান্তিপূর্ণ, আত্মশুদ্ধি ও চরিত্রনির্ভর এবং সমাজ সংস্কারে ধাপে ধাপে অগ্রসর।

বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ইসলামি আন্দোলনের জন্য প্রজ্ঞা, ধৈর্য ও পরিশুদ্ধ দাওয়াহর বিকল্প নেই। রাসুল (স.)–এর মডেলই এর শ্রেষ্ঠ পথ।