রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগ ছিল শান্তি, ন্যায়বিচার ও সামাজিক নিরাপত্তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় অপরাধ প্রতিরোধ ও ন্যায়বিচারের স্বচ্ছতা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত। এ প্রতিবেদনে আমরা সীরাত গ্রন্থের আলোকে রাসুল (স.)-এর যুগে অপরাধীদের গ্রেফতারের পদ্ধতি, নীতিমালা এবং উদাহরণ তুলে ধরব।
অপরাধ প্রতিরোধে ইসলামি নীতিমালা
ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হলো অপরাধ প্রতিরোধ করা এবং অপরাধীদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনা। রাসুল (স.)-এর শাসনামলে অপরাধ প্রতিরোধে নিচের কিছু মূলনীতি অনুসরণ করা হতো।
সতর্কতা ও পর্যবেক্ষণ: মুসলিম সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করত। কারো আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হতো।
প্রমাণ ও সাক্ষ্য: কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করতে শক্তিশালী প্রমাণ ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যের প্রয়োজন হতো।
ন্যায়বিচারের স্বচ্ছতা: বিচারের সময় পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা হতো এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণিত হলে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হতো।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নেকি খেয়ে ফেলে যে ৬ গুনাহ
অপরাধীদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া
রাসুল (স.)-এর শাসনামলে অপরাধীদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া ছিল সুবিন্যস্ত এবং সুশৃঙ্খল। প্রধান কিছু ধাপ ছিল। যেমন-
অভিযোগ প্রাপ্তি: কেউ অপরাধ করলে প্রথমে অভিযোগ দায়ের করা হতো। অভিযোগ প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করা হতো।
তদন্ত কার্যক্রম: প্রাথমিক তদন্তে অপরাধের সত্যতা নিশ্চিত হলে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হতো।
গ্রেফতার প্রক্রিয়া: অপরাধীকে গ্রেফতারের সময় যথাসম্ভব অহিংস পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো।
বিচার ও শাস্তি: অপরাধ প্রমাণিত হলে কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হতো।
আরও পড়ুন: ‘ইসলামে প্রমাণ ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া দূরের কথা, সন্দেহ করাটাই অপরাধ’
সীরাতের আলোকে উদাহরণ
১. মায়িয ইবনে মালিক (রা.)-এর ঘটনা: ব্যভিচারের অপরাধে নিজ উদ্যোগে রাসুল (স.)-এর কাছে এসে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। রাসুল (স.) বারবার তাকে ফিরে যেতে বলেন, কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে নিজের অপরাধ স্বীকার করলে প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার কার্য সম্পন্ন হয়।
২. গণিমতের সম্পদ আত্মসাৎ: গণিমতের সম্পদ আত্মসাতের ঘটনায় একটি ঘটনা পাওয়া যায়, যেখানে যুদ্ধের মালের বিষয়ে অসতর্কতা দেখা দেয় এবং তা ধরা পড়ে। রাসুল (স.) কঠোরভাবে এর নিন্দা করেন এবং বলেন, ‘যে কেউ গণিমতের সম্পদ আত্মসাৎ করে, সে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে। এরপর তাকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হয়।
৩. হাত কেটে ফেলার ঘটনা: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকট এক চোরকে আনা হলে তিনি (স.) তার হাত কেটে দিলেন। তখন সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা বুঝতে পারিনি যে, আপনি তার হাত কেটে দেবেন। অতঃপর তিনি (স.) বললেন, যদি (আমার মেয়ে) ফাতেমাও হতো, তবু আমি তার হাত কেটে দিতাম।
৪. ইহুদী নারীর হত্যাকাণ্ড ও গ্রেফতার: একজন সাহাবিকে বিষপ্রয়োগে হত্যার অভিযোগে এক ইহুদি নারীকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থিত হলে রাসুল (স.) নির্দেশ দেন তাকে কিসাস (প্রতিশোধমূলক বিচার) হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে।
রাসুল (স.)-এর শাসনামলে অপরাধীদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত সুবিন্যস্ত, ন্যায়নিষ্ঠ এবং মানবিকতাপূর্ণ। বর্তমান যুগেও এই নীতিমালা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, যা একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক হতে পারে।
সূত্র : সহিহ বুখারি; সহিহ মুসলিম; নাসায়ি, ইবনে হিশাম, আর রাহিকুল মাখতুম

