images

ইসলাম

সত্যের পথে ফিরে আসা মুমিনের অমূল্য গুণ

ধর্ম ডেস্ক

১৯ মে ২০২৫, ০৩:০২ পিএম

মুমিনের পরিচয় তার সত্য গ্রহণের মানসিকতা ও বাতিল পরিহারের দৃঢ় সংকল্পে। ইসলামের মৌলিক শিক্ষাই হলো—সত্যকে আলিঙ্গন করে মিথ্যার মলিনতা ঝেড়ে ফেলা। এই গুণকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পালন করেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পুণ্যাত্মা সাহাবীগণ। তাঁদের জীবনে সত্য গ্রহণের যে মহৎ দৃষ্টান্ত রয়েছে, তা আজও আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।

সাহাবিরা দ্রুত সত্য গ্রহণ করতেন

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সাহাবিরা সত্য গ্রহণে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তা মানবজাতির জন্য এক অনুপম উদাহরণ। এর মধ্যে অন্যতম দৃষ্টান্ত হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)। তিনি ছিলেন ইহুদী ধর্মগুরু। নবুয়তের সত্যতা যাচাই করতে নবীজির কাছে তিনটি প্রশ্ন করেন। নবীজির ঐশী জ্ঞানে পরিপূর্ণ জবাবে তাঁর হৃদয় প্রশান্ত হয় এবং সাথে সাথেই ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আশহাদু আন্নাকা রাসুলুল্লাহ’—অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসুল। (সহিহ বুখারি: ৩৩২৯)

আরও পড়ুন: যে সাহাবির সঙ্গে কথা বলেছেন মহান আল্লাহ

সত্য গ্রহণে তাকওয়ার ভূমিকা

মুমিন যখনই বুঝতে পারে যে তার পথভ্রষ্টতা ঘটেছে, তখন সে সাহসিকতার সঙ্গে সেই ভুলকে ত্যাগ করে এবং হকের দিকে ফিরে আসে। এই ক্ষেত্রে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি প্রধান ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী বস্তু দান করবেন, তোমাদের গুনাহ দূর করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন।’ (সুরা আনফাল: ২৯)

আলেমদের ইখতিলাফ শাখাগত বিষয়ে

দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমগণের মধ্যে মতভেদ থাকলেও, তা সর্বদা দলিল নির্ভর এবং শাখাগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ। এটি দ্বীনের মৌলিক আকিদায় কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে না। বরং, এটি ইজতিহাদ ও গবেষণার একটি অংশ। ইমাম আবুল মুযাফফর আস-সামআনি (রহ.) তার গ্রন্থ ‘আল ইনতিসার লিআসহাবিল হাদিস’ এ এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। (দ্র. আল ইনতিসার লিআসহাবিল হাদিস, পৃষ্ঠা ১০৫-১১০)

আরও পড়ুন: জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির বৈশিষ্ট্য

সলফে সালেহিনদের সত্যে ফেরার মহান দৃষ্টান্ত

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, অনেক বড় বড় আলেম ও ফকিহ তাদের ভুল বুঝতে পারার সাথে সাথেই তা পরিত্যাগ করে হকের দিকে ফিরে এসেছেন। এই মানসিকতাই মুমিনকে হকের পথে দৃঢ় রাখে এবং বাতিল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এটি মুমিনের সাহসিকতা ও আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থার নিদর্শন। (হিলইয়াতুল আউলিয়া, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা-৬)

মোটকথা, মুমিনের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—ভুল বুঝতে পারলে তা দ্রুত ত্যাগ করা এবং হকের দিকে ফিরে আসা। ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য এখানেই প্রতিফলিত হয় যে, সত্যকে গ্রহণে কোনো লজ্জা বা সংকোচ নেই; বরং তা মহান গুণ। আসুন, আমরা সত্যকে আলিঙ্গন করি, মিথ্যাকে পরিহার করি এবং হকের পথে অবিচল থাকি।