ধর্ম ডেস্ক
১৯ মে ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
আল্লাহ তাআলা মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও বিচারক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও মানুষ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ হলো আল্লাহর বিধানের বিপরীত কাজ করা। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কেন অপরাধ করে, কীভাবে অপরাধের পথে পরিচালিত হয় এবং এর প্রতিকার কী হতে পারে, তা বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, যেকোনো কাজ যা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে, তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। কোরআন ও হাদিসে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেমন, মিথ্যা বলা, চুরি করা, হত্যা করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি।
১. শয়তানের প্ররোচনা: শয়তান মানুষের চিরন্তন শত্রু। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়।’ (সুরা বাকারা: ২৬৮)
২. নফসের দুর্বলতা: মানুষের প্রবৃত্তি বা নফস অপরাধের দিকে আকৃষ্ট করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই নফস মন্দের দিকে প্ররোচিত করে।’ (সুরা ইউসুফ: ৫৩)
আরও পড়ুন: সারাদিন ৬ জিকিরের অবিশ্বাস্য ফজিলত
৩. অজ্ঞতা ও অশিক্ষা: দ্বীনি জ্ঞান বা ইসলামি বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা না থাকলে, মানুষ সহজেই ভুল পথে পা বাড়ায়। অজ্ঞতা মানুষকে অকল্যাণের দিকে যায়, আর জ্ঞান মানুষকে কল্যাণের দিকে নিয়ে চলে। তাই জ্ঞানকে বলা হয় আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়।’ (সুরা বাকারা: ২৬৯)
৪. পার্থিব লোভ ও লালসা: অধিক সম্পদ, ক্ষমতা বা খ্যাতির লোভ মানুষকে অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধন-সম্পদের মোহে পড়ে গিয়েছ।’ (সুরা তাকাসুর: ১)
৫. খারাপ সঙ্গ: খারাপ বন্ধু বা পরিবেশ মানুষকে অপরাধের দিকে আকৃষ্ট করে। মানুষ যার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে, ওঠা-বসা করে তার ব্যক্তিত্বের প্রভাব নিজের ওপর পড়তে শুরু করে। রাসুলুল্লাহ (স.) এ বিষয়টি খোলাসা করেছেন এভাবে— ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩)
১. তাওবা ও ইস্তিগফার: আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তাওবা করলে তিনি সব গুনাহ মাফ করে দেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে সফলকাম হও।’ (সুরা নূর: ৩১)
আরও পড়ুন: তাওবা কবুলের জন্য যে দোয়াগুলো পড়বেন
২. ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন: ইসলামিক জ্ঞান ও ধর্মীয় অনুশাসন মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়।’ (সুরা বাকারা: ২৬৯)
৩. নফসের নিয়ন্ত্রণ: আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করলো, সে সফলকাম হলো।’ (সুরা শামস: ৯)
৪. পরহেজগারদের সঙ্গে থাকা: সৎ ও ধার্মিক লোকদের সাথে মেলামেশা অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনে এবং সঠিক পথে থাকা সহজ হয়। তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! (তোমরা) আল্লাহকে ভয় কর, আর সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)
৫. আল্লাহর জিকির: আল্লাহর স্মরণ শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করে। আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হলে ব্যক্তির ওপর শয়তানের প্রভাব বাড়ে। ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, ফলে তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ।’ (সুরা মুজাদালা: ১৯)
মানুষ অপরাধ করে মূলত শয়তানের প্ররোচনা, নফসের দুর্বলতা, অজ্ঞতা এবং খারাপ সঙ্গের কারণে। ইসলাম এসব অপরাধ থেকে মুক্তির সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ মেনে চললে এবং তাওবা করে নিজেকে সংশোধন করলে অপরাধমুক্ত জীবন যাপন করা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন।