images

ইসলাম

ইসলামে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

ধর্ম ডেস্ক

১৯ মে ২০২৫, ০৭:৫৩ এএম

পরিচ্ছন্নতা মানব জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতাই নয়, আত্মিক পবিত্রতার প্রতীক হিসেবেও ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। এমনকি পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ হিসেবে গণ্য করেছে ইসলাম। একজন মুমিনের দৈনন্দিন ইবাদতের পূর্বশর্ত হিসেবেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পবিত্র কোরআনে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সরাসরি পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনকারীদের প্রশংসা করেছেন। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে অজু, গোসল, পবিত্র পোশাক পরিধান এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকে কেবল বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা হিসেবে নয়, আত্মিক পরিশুদ্ধতার মাধ্যম হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, মদিনার কোবা এলাকার লোকদের পরিচ্ছন্নতার কারণে কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে (সুরা তাওবা: ১০৮)। এছাড়াও সুরা মুদ্দাসসিরে পরিষ্কার পোশাক পরিধান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে (সুরা মুদ্দাসসির: ৪)

আরও পড়ুন: গোসল ফরজ কেন হয়, ফরজ গোসলের নিয়ম

হাদিসে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক অংশ।’ (সহিহ মুসলিম: ২২৩) এখানে স্পষ্টভাবে পবিত্রতা বা পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, একজন মুমিন ব্যক্তি যদি পরিচ্ছন্ন না থাকেন, তবে তার ঈমান পূর্ণতা পায় না। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নামাজে দাঁড়াবে, তখন তার পোশাক ও শরীর পবিত্র রাখতে হবে।’ (সহিহ বুখারি: ১/১২৩)

ইসলামে পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন ধরণ

১. শারীরিক পরিচ্ছন্নতা যেমন গোসল, অজু, দাঁত মাজার (মেসওয়াকের) নির্দেশ। পবিত্রতা নামাজ কবুলের পূর্বশর্ত। পবিত্র শরীর ও কাপড় ছাড়া ব্যক্তির নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্রতা নামাজের চাবি।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৭৬)
মেসওয়াক ব্যবহার শুধু পরিচ্ছন্নতার অংশ নয়, এটি ইবাদত হিসেবেও গণ্য। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, 'যদি আমি আমার উম্মতের জন্যে কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের সময় মেসওয়াক করতে আদেশ দিতাম।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮৭)

২. পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা যেমন রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ঈমানের সত্তরোর্ধ্ব শাখার মধ্যে একটি শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৫)

৩. আত্মিক পরিচ্ছন্নতা যেমন হিংসা, বিদ্বেষ ও পাপ থেকে দূরে থাকা। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রকে পছন্দ করেন।’ (তিরমিজি: ২৭৯৯) পবিত্রতা মুমিন জীবনের সৌন্দর্য। ঈমানের পরিচায়ক। মুমিন দেহ ও মনের দিক থেকে সব সময় পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে। অপবিত্রতা থেকে নিজের দেহ-মনকে রক্ষা করবে। রাসুলুল্লাহ (স.) পবিত্রতা রক্ষায় মুমিনকে যত্নবান হতে উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন, ‘প্রকৃত মুমিন ছাড়া আর কেউই অজুর প্রতি যত্নবান হয় না।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৪৩৬)

আরও পড়ুন: ফরজ গোসলের পর নামাজের জন্য অজু করতে হবে কি?

পরিচ্ছন্নতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

আধুনিক বিজ্ঞানও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাত ধোয়া, দাঁত পরিষ্কার রাখা এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে রোগজীবাণুর সংক্রমণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (স.) যে পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিয়েছেন, তা শুধু আধ্যাত্মিকভাবে নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

পরিচ্ছন্ন বান্দাদের জন্যই জান্নাত

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে।’ (ফাইজুল কাদির: ৩০৬৫)

মোটকথা, ইসলামের নির্দেশনা মেনে পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করলে সমাজে শান্তি, সুস্থতা ও সুস্থিরতা বজায় থাকে। ইসলাম আমাদের শুধু আত্মিক নয়, বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার দিকেও সমানভাবে মনোযোগী হতে শিক্ষা দিয়েছে। পরিচ্ছন্নতা শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক দায়িত্বও। সমাজের প্রতিটি সদস্য যদি এ শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করে, তাহলে আমাদের চারপাশ হবে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর।