ধর্ম ডেস্ক
১৪ মে ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম
ইসলামে বদনজর ও রুকইয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বদনজর হলো মানুষের ঈর্ষাপূর্ণ বা হিংসাত্মক দৃষ্টি, যা অন্যের জীবনে অশান্তি, অসুস্থতা বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর বিপরীতে, রুকইয়া হলো কোরআন ও সহিহ হাদিসের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক বা চিকিৎসার একটি ইসলামিক পদ্ধতি, যা বদনজর, জাদু এবং শয়তানি প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
সুরা আল-ফালাক: ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভোরের প্রতিপালকের, ... এবং হিংসুকের হিংসা থেকে, যখন সে হিংসা করে।’ (সুরা ফালাক: ১-৫)
সুরা ইউসুফ: হজরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর সন্তানদের মিসরে আলাদা পথে প্রবেশ করতে বলেছিলেন, যেন বদনজর না লাগে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি বললেন, ‘হে আমার সন্তানরা! একসাথে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো...।’ (সুরা ইউসুফ: ৬৭)
হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা বদনজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা নজরের প্রভাব সত্য।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৫০৮)
এছাড়াও, বদনজরের কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে, মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি কাজেও ব্যর্থতা আসতে পারে।
আরও পড়ুন: ব্ল্যাক ম্যাজিকের প্রভাব ঘরে ঘরে, বাঁচার আমল
শাইখ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেছেন, ‘অনেক সময় ঈর্ষার ফলে বদনজর লেগে যায়। এটি শুধু শারীরিক অসুস্থতা নয়, বরং মানসিক অস্থিরতা ও পারিবারিক অশান্তিরও কারণ হতে পারে।’ (মাজমু ফতোয়া ইবনে উসাইমিন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৩)
শাইখ বিন বায (রহ.) বলেন, ‘যখন কেউ অকারণে অসুস্থতা অনুভব করে, চিকিৎসায় উপকার পায় না এবং ঘরে ঘরে অশান্তি লেগে থাকে, তখন বুঝতে হবে বদনজরের প্রভাব থাকতে পারে।’ (ফতোয়া ইসলামিয়্যাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৭)
কোরআন-হাদিসের আলোকে আলেমরা বদনজরের যেসব লক্ষণের কথা বলেন সেগুলো হলো-
১. হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া।
২. মাথাব্যথা, শরীরের ব্যথা বা ক্লান্তি।
৩. চিকিৎসায় কোনো উপকার না পাওয়া।
আরও পড়ুন: ঝাড়ফুঁকের সময় কোরআনের এই ৬ আয়াত পড়তে ভুলবেন না
১.অকারণে দুশ্চিন্তা বা ভয়।
২. আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন।
৩. কাজে অগ্রগতি না হওয়া।
১. দাম্পত্য জীবনে অশান্তি।
২. হঠাৎ করে অর্থনৈতিক সংকট।
রুকইয়া হলো কোরআনের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক বা চিকিৎসা। এটি মূলত জাদু, বদনজর এবং শয়তানি প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহৃত হয়।
রুকইয়ার জন্য প্রাথমিক কিছু দোয়া: ওলামায়ে কেরাম রুকাইয়ার জন্য যেসব আমল করতে বলেন তা হলো-
১. সুরা আল-ফাতিহা পড়া
২. আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা: ২৫৫) পড়া
৩. সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা ফালাক ও সুরা নাস ৩ বার করে পড়া।
৪. ‘মাশাআল্লাহ’ বলা, যেন আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই না ঘটে।
৫. নিয়মিত জিকির ও দোয়া করা।
৬. কাজ শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা।
আরও পড়ুন: রোগমুক্তিতে কার্যকর কোরআনের ৬ আয়াত
বদনজর থেকে বাঁচাতে নবীজি (সা.) ছোটদের কোলে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে এমন অনেক বর্ণিত হয়েছে। হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.)কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বাক্যগুলো পড়ে ফুঁক দিতেন—
أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ উচ্চারণ: উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন। অর্থ: আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি: ৩৩৭১)
ইসলামে বদনজর একটি বাস্তব সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। তবে রুকইয়ার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে, ইসলামিক বিধান মেনে চলা, শিরক থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখাই হলো নিরাপত্তার মূল পথ।