ধর্ম ডেস্ক
১৪ মে ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মুসলমান পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে সমবেত হন। এই বৃহৎ সমাবেশে হাজিদের বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, যাতায়াতের অসুবিধা, আবাসন সংকট এবং পথ হারানোর ঘটনা। এই প্রতিবেদনে হাজিদের সাধারণ সমস্যাগুলো এবং তা সমাধানে বাংলাদেশ ও সৌদি প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরা হয়েছে।
সৌদি আরবের প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক একটি সাধারণ সমস্যা। ২০২৪ সালের হজে অনেক হাজি তীব্র সূর্যতাপ ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা: বাংলাদেশ সরকার হজযাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে। হাজিদের মাস্ক পরিধান, পর্যাপ্ত পানি পান এবং হালকা পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র:
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের জন্য ব্যাপক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মক্কা ও মদিনাসহ সারাদেশে মোট ৩২টি হাসপাতাল, ১৫১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৬টি মোবাইল ক্লিনিকসহ মোট ১৮৩টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৫,০০০ চিকিৎসকসহ ২০,০০০-এর বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত আছেন। এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে জরুরি চিকিৎসা, ডায়ালাইসিস, হৃদরোগের চিকিৎসা, টিকা প্রদান, ওষুধ সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
আরও পড়ুন: হজপালনে ধাপে ধাপে যেসব কাজ করতে হয়
মিনায়, আরাফাতে এবং মুজদালিফায় আবাসনের ঘনত্ব ও যাতায়াতের সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় সঠিকভাবে পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
হজ গাইড নিয়োগ: বাংলাদেশ সরকার প্রতি ৪৪ জন হাজির জন্য একজন গাইড নিয়োগ দিয়েছে, যারা হাজিদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করেন।
স্মার্ট কার্ড ও প্রযুক্তি: সৌদি সরকার হাজিদের জন্য স্মার্ট কার্ড ও স্মার্ট রোবট চালু করেছে, যা বিভিন্ন ভাষায় তথ্য প্রদান করে এবং পথ নির্দেশনা দেয়।
আরও পড়ুন: হজযাত্রায় মৃত্যুবরণকারীদের মর্যাদা
প্রতি বছর কিছু হাজি মিনায় বা আরাফাতে পথ হারিয়ে ফেলেন, যা তাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা: হজযাত্রার আগে হাজিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং গাইডরা তাদের সাথে থাকেন, যাতে তারা একা কোথাও না যান।
হেল্পলাইন ও সহায়তা কেন্দ্র: বাংলাদেশ হজ অফিস ২৪/৭ হেল্পলাইন চালু করেছে (কল সেন্টার: ১৬১৩৬), যেখানে হাজিরা জরুরি সহায়তা পেতে পারেন।
বাংলাদেশ ও সৌদি প্রশাসন হজযাত্রীদের নিরাপদ ও সুষ্ঠু হজ পালনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণ প্রদান। এই পদক্ষেপগুলো হাজিদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে।
সকল সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি হাজিদের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত তথ্যপ্রাপ্তি, সঠিক নির্দেশনা মানা এবং গাইডদের পরামর্শ মেনে চললে অনেক দুর্ঘটনা ও অসুবিধা এড়ানো সম্ভব। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং ভ্রমণকালে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখা উচিত।
হজ প্রশিক্ষণের সময় হাজিদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, পথ নির্দেশনা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে ভালোভাবে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে, প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন স্মার্ট কার্ড এবং স্মার্ট রোবটের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া উচিত।