ধর্ম ডেস্ক
১৩ মে ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম
অষ্টধাতুর উপকারিতা নিয়ে ভিত্তিহীন কিছু কথার প্রচলন রয়েছে আমাদের সমাজে। অষ্টধাতুর ব্যবহারে রোগমুক্তি, বালা-মসিবত কেটে যাওয়া ইত্যাদি শিরকি ধারণা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে এবং এই উপমহাদেশের অনেক মুসলমানদের মধ্যেও। আসুন, অষ্টধাতুর ব্যবহার নিয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি জেনে নেই।
অষ্টধাতু মানে আট ধাতু। সোনা, রুপা, তামা, সীসা, দস্তা, টিন, লোহা এবং পারদ এই আট ধাতুর সমন্বয়ে গঠিত একটি সংকর ধাতুকে অষ্টধাতু বলে। হিন্দুধর্মে এর বেশ কদর রয়েছে। দেব-দেবির মূর্তি তৈরিতে অষ্টধাতু ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আর অষ্টধাতুর তৈরি আংটি অনেকে পরেন বিশেষ উদ্দেশ্যে। যেমন ভাগ্য পরিবর্তন বা মসিবত কেটে যাওয়া ইত্যাদি।
ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, তাকদিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনা বিশেষ উদ্দেশ্যে আংটি ব্যবহার যেমন–শনির দশা, রাহুর গ্রাস ও কালের দৃষ্টি থেকে রক্ষা; ফাড়া কাটানো, দূর্ভাগ্য দূর করা, সৌভাগ্য আনয়ন করা; এসব উদ্দেশ্যে আংটি ব্যবহার করা হারাম ও শিরক। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড : ৮, পৃ. ৬৯-৭০)

আরও পড়ুন: পুরুষের জন্য রুপা ব্যবহারের শর্ত
অষ্টধাতুর আংটি পরলে কিছুই হয় না। বরং অষ্টধাতুতে ভাগ্য পরিবর্তন হবে বা রাহুর গ্রাস কেটে যাবে—এ ধরনের কথা ও বিশ্বাস ঈমানবিধ্বংসী। ইসলামের দৃষ্টিতে ভাগ্য পরিবর্তনের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা এবং তা পরিবর্তন করতে পারে শুধুমাত্র দোয়া। সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, নেককাজ ব্যতীত অন্য কিছুতে আয়ু বৃদ্ধি পায় না এবং দোয়া ব্যতীত তকদির পরিবর্তন হয় না। আর পাপাচারের কারণেই মানুষকে তার জীবিকা থেকে বঞ্চিত করা হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯০)
)
বিশেষ উদ্দেশ্যে অষ্টধাতুর আংটি ব্যবহার মুমিন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জন্য হারাম ও শিরক। কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে পুরুষের জন্য শুধু রুপা ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। তা-ও এক মিছকাল বা ৪.৩৭৪ গ্রামের বেশি হতে পারবে না। (ফতোয়া কাজি খান: ৩/৪১৩) এ ছাড়া অন্য যেকোনো ধাতুর আংটি পুরুষের জন্য মাকরুহ।
আরও পড়ুন: স্বর্ণের গহনা উপহার নেওয়া পুরুষের জন্য জায়েজ?
নারীদের আংটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেবল যেকোনো পরিমাণ সোনা ও রুপা ব্যবহার করা জায়েজ। অন্য ধাতুর আংটির ব্যবহার বৈধ নয়। পুরুষের জন্য সোনার আংটির ব্যবহার নিষিদ্ধ। (আহসানুল ফাতওয়া, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা ৬৯-৭০/রদ্দে মুখতার, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা-২২৯) নারীদের জন্য স্বর্ণ-রুপার অলংকার ব্যবহার জায়েজ। তাদের জন্য এক্ষেত্রে কোনো বিশেষ পরিমাণ নির্ধারিত নেই।
(সুনানে আবু দাউদ: ২/৫৮০; আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৮, ৪৯; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/৩১৭; আল বাহরুর রায়েক: ৮/১৯৯)