images

ইসলাম

তাওয়াফের সময় কথা বলা যাবে?

ধর্ম ডেস্ক

০৪ মে ২০২৫, ০২:৫৬ পিএম

তাওয়াফ হজ ও ওমরার অপরিহার্য আমল। তাওয়াফ অর্থ ঘোরা বা প্রদক্ষিণ করা। পবিত্র কাবার চারপাশে (হাজরে আসওয়াদের কোনা থেকে শুরু করে) সাত বার ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়। পবিত্র কোরআনে কাবা তাওয়াফের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা যেন প্রাচীন ঘর (কাবা) তাওয়াফ করে। (সুরা হজ: ২৯)

তাওয়াফের সময় কথাবার্তার বিধান
তাওয়াফের সময় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন নবীজি। যদিও নামাজের মতো তাওয়াফের সময় কথা বলা নিষিদ্ধ নয়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, বায়তুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা নামাজ আদায় করার মতোই। তবে নামাজে আপনারা কথা বলতে পারেন না, কিন্তু তাওয়াফের সময় কথা বলতে পারেন। তবে তাওয়াফের সময় সময় কথা বললে শুধু ভালো কথাই বলুন। (সুনানে তিরমিজি: ৯৬০)

তাওয়াফের সময় পানাহারের বিধান
তাওয়াফের সময় প্রয়োজনে পানি পান করা যেতে পারে। কিন্তু খাবার খাওয়া মাকরুহ। খাবার খাওয়ার প্রয়োজন থাকলে তাওয়াফের আগেই খাবার খেয়ে নেবে অথবা তাওয়াফের পরে খাবে।

তাওয়াফের সময় পবিত্র থাকা জরুরি
তাওয়াফের সময় অজু অবস্থায় থাকা ওয়াজিব। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাওয়াফ করতে চাইতেন তখন তিনি অজু করে নিতেন। (সহিহ মুসলিম: ১২৯৭)

আরও পড়ুন: বদলি হজ কাকে দিয়ে করানো উত্তম

তাওয়াফের সময় তেলাওয়াতের চেয়ে দোয়া ভালো
তাওয়াফ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ হলেও তখন তেলাওয়াত না করে দোয়া, জিকির করাই উত্তম। বিশেষত যে সকল দোয়া, জিকির হাদিস বা আছারে বর্ণিত হয়েছে। ইয়াহইয়া আলবাক্কা (রহ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এক ব্যক্তিকে তাওয়াফ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করতে দেখে তাকে বারণ করেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৫৪২৪)

লায়ছ (রহ) থেকে বর্ণিত, মুজাহিদ (রহ) সম্পর্কে তিনি বলেন- তিনি তাওয়াফ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা পছন্দ করতেন না। বরং সেসময় (তাওয়াফের সময়) আল্লাহর জিকির, হামদ ও তাকবির বলা উত্তম। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১৫৮৭৮, দারু কুনুজিল ইশাবিলিয়া প্রকাশিত) আলেমরা বলেন, তাওয়াফকারী দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য যেকোনো দোয়া যেমন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে পারবে। (মাজমুউল ফতোয়া: ২৪/৩২৭)

তাওয়াফের সময় অজু ভেঙে গেলে করণীয়
তাওয়াফের তিন চক্কর বা এর কম আদায়ের পর কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে অজু করে এসে পুনরায় শুরু থেকে সাত চক্কর পূর্ণ করা মোস্তাহাব। তবে অজু করে আসার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো করে নিলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: তাওয়াফের পর নামাজ পড়ার নিয়ম

আর তাওয়াফের চার চক্কর বা এর বেশি আদায়ের পর অজু ভেঙে গেলে উত্তম হলো অজু করে এসে পুনরায় প্রথম থেকে চক্কর শুরু না করে শুধু অবশিষ্ট চক্করগুলো আদায় করা। তবে এ ক্ষেত্রেও কেউ যদি পুনরায় প্রথম থেকে সাত চক্করই পূর্ণ করে তাহলে সেটিও শুদ্ধ হবে।

তাওয়াফের সময় পবিত্র পোশাকে থাকা সুন্নত। তাওয়াফের মাঝে যদি কারো পোশাক অপবিত্র হয়ে যায় যেমন কোলের শিশু যদি প্রস্রাব করে দেয় এবং তাওয়াফকারী ওই অবস্থাতে তাওয়াফ শেষ করে, তাহলে তার তাওয়াফ হয়ে যাবে। এ কারণে কোনো সদকা বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না।

তাওয়াফের সময় যে দোয়া পড়বেন
তাওয়াফের এমন কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই যা না পড়লে তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। বরং যেকোনো দোয়া পড়া যায়। হাদিসে এ সংক্রান্ত কয়েকটি দোয়া পাওয়া যায় যা রাসুল (স.) তাওয়াফের সময় পড়েছেন। যেমন- রুকনে ইয়ামানি থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে যাওয়ার সময় আল্লাহর রাসুল (স.) কোরআনে উল্লেখিত এ দোয়াটি পড়েছেন বলে বর্ণিত রয়েছে -رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: ‍‘রব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আজাবান-নার।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১; আবু দাউদ: ১/ ২৬০)