ধর্ম ডেস্ক
২১ মার্চ ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
বছরে দুই ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব। একটি হলো ঈদুল ফিতর তথা রমজানের ঈদ, অপরটি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এই দুই জাতীয় উৎসবকে ঘিরে মুসলমানদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা সুন্নতের বিপরীত।
বর্তমানে ঈদের অজুহাতে রমজানের শেষ দশকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে পড়ছেন মুসলমানরা। বেহুদা খরচের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি পর্দার বিধান লঙ্ঘন করছেন অনেকে। অথচ ঈদকে কেন্দ্র করে এমনসব আচরণের সঙ্গে দ্বীন ও শরিয়তের কোনো সম্পর্ক নেই।
আর্থিক সচ্ছলতা থাকুক বা না থাকুক, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিত্যনতুন ডিজাইন ও ফ্যাশনেবল পরিধেয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছেতাই করছে মানুষ। এতে নষ্ট হচ্ছে রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো। অথচ রমজানের শেষ দশক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, নবী কারিম (স.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি : ১০৫৩)
আরও পড়ুন: ঈদের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন
এছাড়াও ঈদ প্রস্তুতির পেছনে মানুষ জড়িয়ে পড়ছে বেহুদা খরচের মতো বড় গুনাহে। ইসলামে এটি নিন্দনীয়। বেহুদা খরচকে শয়তানের কাজ বলে সাবধান করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৬, ২৭)
ঈদ প্রস্তুতিতে বাড়াবাড়ির সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হলো—আল্লাহর নৈকট্যলাভের শ্রেষ্ঠতম সময়ে রাস্তা-ঘাটে, বাজারে, শপিংমলে অনেকে পর্দার বিধান লঙ্ঘনের গুনাহে জড়িয়ে পড়ছেন। অথচ পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার হাতিয়ার হিসেবেই আল্লাহ তাআলা পর্দার বিধান দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সূরা আহজাব: ৩৩)
কেউ কেউ ঈদশপিংয়ের পেছনে এতই ব্যস্ত যে রোজা, ইফতার কিংবা তারাবির মতো মহান ইবাদতের ব্যাপারেও যেন বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। নাউজুবিল্লাহ!
আরও পড়ুন: রমজানের শেষ দশকে নবীজির আমল
যদি আমাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রদর্শিত পথ, শিক্ষাদীক্ষা ও তাঁর আদর্শের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং অনুরাগ থাকে, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর শাফায়াত লাভের তপ্ত বাসনা অন্তরে জাগ্রত থাকে, তাহলে আমাদের এসব অনর্থক কাজ থেকে খাঁটি মনে তাওবা করা উচিত।
মুসলমানদের এই অঙ্গীকার করা উচিত যে এই পবিত্র মাসে সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকব, একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর দিকে ফিরে আসব। আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানের পবিত্রতা রক্ষার তাওফিক দান করুন। ঈদের আনন্দময় দিনটিকে ঘিরে গুনাহের কাজ থেকে, রমজানের আদব লঙ্ঘন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।