পবিত্র রমজানের শেষ দশক খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শেষ দশকে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) এই দিনগুলোতে আমলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। আমাদের উচিত, পবিত্র রমজানের এই দশককে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া। ইবাদত-বন্দেগি বাড়িয়ে দেওয়া। শেষ দশকে নবীজি (স.)-এর বিশেষ কিছু আমল নিচে তুলে ধরা হলো।
১. ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া
পুরো রমজান জুড়েই নবীজি আমলের ওপর থাকতেন। শেষ দশক এলে তা আরো বেড়ে যেত। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা এত বেশি বাড়িয়ে দিতেন, যেমনটি অন্য সময় করতেন না। (আস সুনানুল কুবরা: ৮৩৫১; মুসলিম: ১১৭৫)
বিজ্ঞাপন
২. পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দেওয়া
রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (স.) রাত জাগতেন। শেষরাতে পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (স.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি: ২০২৪)
আরও পড়ুন: রমজানে নবীজির পারিবারিক জীবন যেমন কাটত
৩. ইতেকাফ করা
রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সুন্নত আমল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতেকাফ করেছেন।’ (বুখারি: ১৮৬৮; মুসলিম: ২০০৬)
৪. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা কদর: ১-৫)
বিজ্ঞাপন
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান বলতে মূলত বিশেষ ফজিলত লাভের আশায় গুনাহ বর্জন এবং ইখলাসের সঙ্গে দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকারের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করাকে বোঝানো হয়। যেহেতু রাতটি কখন তা নিশ্চিত নয়, তাই শেষ দশকে বিশেষ করে বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি: ২০১৭)
৫. বেশি বেশি দোয়া করা
নবীজি (স.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বলো- اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি: ৩৫১৩)
আরও পড়ুন: যে জিকিরগুলো আপনাকে শক্তি যোগাবে
৬. তাওবা করা
মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস রমজান। প্রিয়নবী (স.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা ও ইস্তেগফার করতেন। রমজান ছাড়াও এই আমল নবীজির নিয়মিত ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।’ (বুখারি: ৬৩০৭)
কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (তিরমিজি: ৩৫৪৫)
৭. সদকাতুল ফিতর আদায় করা
পবিত্র রমজানের শেষ দশকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সদকাতুল ফিতর আদায়। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঈদের নামাজের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। (বুখারি: ১৫০৩)
নবীজির উম্মত হিসেবে আমাদের উচিত- নবীজি (স.)-এর শেখানো উল্লেখিত আমলগুলো শেষ দশকে যথাযথ সম্পন্ন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।