images

ইসলাম

মুক্তিযোদ্ধা আলেম ও গবেষক জালালাবাদীর চলে যাওয়ার এক বছর

ঢাকা মেইল ডেস্ক

১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২২ পিএম

গত বছরের এই দিনে (২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি) দেশের প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা আলেম, লেখক, গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী আল আজহারী (রহ.) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ-এর লেখক-গবেষক ও সম্পাদক, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদাররেসিনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের ওয়াজ মাওলানা পদে জুমার বাংলা খুতবা দিতেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন গণভবন ও বাংলাদেশ সচিবালয় মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর লিখিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। 

মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদীর জন্ম শুক্রবার ২৯ মে, ১৯৪২ সালে সিলেটের টুকেরগাঁওয়ের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তিনি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। পরে ঢাকায় এসে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। এর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিপ্লোমা ইন উর্দু কোর্স সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে উচ্চতর ইমাম ট্রেনিংয়ের জন্য সর্বপ্রথম যে দলকে মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিল, তিনি ছিলেন ওই দলের অন্যতম সদস্য।

তিনি ১৯৭৩ সালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মহানবী (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত বির্ষিকী উপলক্ষ্যে সর্বপ্রথম সিরাতুন্নবী মাহফিলের আয়োজন করেন, যার সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা উত্তর দেশের সংকটাপন্ন মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার এবং এর উন্নয়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে কোরআন তেলাওয়াত ও আজান সম্প্রচার পুনরায় শুরু করতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তাঁরই পরামর্শে সৌদি আরব বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দেওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সর্বপ্রথম হজের ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে প্রেরণ করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হজ যাত্রীদের ‘হজ্ব উমরা ও জিয়ারত’ নামক যে পুস্তক সরকারিভাবে বিতরণ করা হয় তা তাঁরই রচিত।

আরও পড়ুন

প্রবীণ আলেম লেখক আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদীর ইন্তেকাল

লেখক ও গবেষক হিসেবে তিনি দেশে-বিদেশে পরিচিত ছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে তার লিখিত, অনূদিত ও সম্পাদিত অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে তার বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। এছাড়াও তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে তাঁর জীবদ্দশায় দীর্ঘদিন মহানবী সা.-এর জীবনীর ওপর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে ‘মহানবী (স) স্মরণিকা’ শীর্ষক স্মরণিকা প্রকাশ করেছেন, যা সুধী মহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

তাঁর লিখিত ও অনূদিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রসূলুল্লাহর (স) পত্রাবলী, সন্ধি চুক্তি ও ফরমানসমূহ, Holy Prophet's  Mission to Contemporary Rulers, ইসলাম ও রাজনীতি, আমি মুক্তিযোদ্ধা আমি রাজাকার, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শাহবাগ বনাম শাপলা, ইসলামের ডাক (বর্তমানে 'নিমজ্জমান পাকিস্তানের শেষচিত্র' নামে বাজারে প্রচলিত), ভারত যখন  স্বাধীন হচ্ছিল, আল আদাবুল মুফরাদ, জীবন সন্ধ্যায় মানবতা, নবী চিরন্তন (বর্তমানে 'নবী পরশমনি' নামে বাজারে প্রচলিত) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি মওলানা আকরম খাঁর বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন। দৈনিক আজাদে তিনি নিয়মিত লিখতেন। এছাড়াও দৈনিক ইত্তেফাক, নয়া দিগন্ত, দিনকাল প্রভৃতি পত্রিকায় এবং সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও বার্ষিক ম্যাগাজিনসমূহে তাঁর অসংখ্য রচনা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বেতারে ধর্মীয় কথিকা এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় লেখক পরিষদ কর্তৃক তিনি গুণীজন সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন এবং দেশ অধ্যায়ন কেন্দ্র কর্তৃক আলেম মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননায় ভূষিত হন।

তাঁকে মিরপুর-১১স্থ জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রেখে গিয়েছেন।

জেবি