images

ইসলাম

সাইয়িদুল ইস্তেগফারের অর্থ ও মর্ম

ধর্ম ডেস্ক

১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম

images

সাইয়িদুল ইস্তেগফার আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া। দোয়ার শব্দগুলোতে রয়েছে মহান আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, অনুগ্রহ ও বান্দার পাপের স্বীকারোক্তি। গোলাম হিসেবে মনিবের সামনে বিনয় ও নম্রতার সুন্দর প্রকাশ। যে দোয়া ঈমানিয়াতে পরিপূর্ণ। অর্থ ও মর্ম না জানার কারণে অনেকে এই দোয়ার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে না। অথচ মুমিনের সবসময় সাইয়িদুল ইস্তেগফারের সঙ্গে লেগে থাকা উচিত।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় দোয়াটি (সাইয়িদুল ইস্তেগফার) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)

সাইয়িদুল ইস্তেগফার (উচ্চারণসহ)
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ ‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবু-উ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ লাকা বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’

সাইয়িদুল ইস্তেগফারের অর্থ ও মর্ম
اللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ ‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার রব। আপনি ছাড়া নেই কোনো ইলাহ।’ এখানে আল্লাহর বান্দা প্রথমেই স্মরণ ও স্বীকার করছে যে, আল্লাহই তার রব, তার প্রভু ও পরওয়ারদেগার এবং একমাত্র ইলাহ ও মাবুদ।

خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ ‘খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা’ অর্থ: ‘আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন; আমি আপনার বান্দা।’ এই অংশে বান্দা বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করছে যে, তার মেধা, শক্তি সব আল্লাহরই সৃষ্টি। মহান আল্লাহই তাকে প্রতিপালন করছেন। এতে অন্যকারো অংশ নেই। কাজেই চূড়ান্ত আনুগত্য একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য।

আরও পড়ুন: ঈমান মজবুত করতে যে দোয়া পড়বেন

وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ ‘ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু’ অর্থ: ‘আমি যথাসাধ্য মেনে চলব আপনার বিধান ও ফরমান।’ এটি উপরোক্ত সম্পর্কেরই দাবি। এর আরেক অর্থ অঙ্গিকার, চুক্তি ইত্যাদি। সে অনুসারে তরজমা হবে, ‘আমি আপনার সাথে কৃত অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলব।’ এখানে রয়েছে বান্দার ঈমান ও আনুগত্যের ফরমান। অর্থাৎ বান্দা একমাত্র আল্লাহরই উপাসনা করবে, কারণ এর হকদার একমাত্র আল্লাহ তাআলা এবং 
বান্দা আল্লাহর আদেশকেই চূড়ান্তরূপে শিরোধার্য করবে। তাঁর আদেশের উপর কারো আদেশকে প্রাধান্য দিবে না। এখানে ما استطعت ‘যথাসাধ্য’ কথাটির উদ্দেশ্য, আপন দুর্বলতা স্বীকার করা। একে তো আল্লাহর শান মোতাবেক হক আদায় বান্দার সাধ্যেরই অতীত। আর এ কারণে আল্লাহ আপন করুণায় বান্দার উপর তার সাধ্য অনুযায়ী ভার দিয়েছেন, কিন্তু সেই বিধান পালনেও হয়ে যায় বান্দার নিজের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাজনিত নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি। কাজেই করুণাময় প্রভুর সাথে আনুগত্যের চুক্তি নবায়নের সাথে সাথে আপন দুর্বলতা নিবেদনও এই বাক্যের উদ্দেশ্য।

أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ ‘আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু’ অর্থ: ‘আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি নিজ কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে।’ আপন কৃতকর্মের অনিষ্ট ও অশুভ পরিণামই তো ভয়ের বড় কারণ। দুনিয়া ও আখেরাতে যেসব কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার মধ্যে নিজের ভুলই তো সবচেয়ে বড় কারণ। আখেরাতের শাস্তি ও আজাবের পুরোটাই মানুষের নিজের কর্মের ফল। দুনিয়ার অশান্তি ও অস্থিরতার মূলেও নিজের কর্ম। তাহলে সবার আগে তো নজর ফেরানো উচিত নিজের দিকেই। অথচ অনেকক্ষেত্রেই মানুষ অনিষ্টের কারণ অন্যত্র খুঁজে বেড়ায় এবং অন্যকে দোষারোপ করে। অথচ কষ্ট ও অনিষ্টের মূল কারণ নিজেরই কর্ম। উপরের বাক্যে আছে এই সত্যের শিক্ষা ও উপলদ্ধি।

আরও পড়ুন: যে ৭ দোয়া জীবন বদলে দেবে

أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي ‘আবু-উ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ লাকা বিজাম্বি’ অর্থ: ‘স্বীকার করছি আমাকে প্রদত্ত আপনার সকল দান আর স্বীকার করছি আমার পাপ।’ দোয়ার এই অংশে বলা হচ্ছে, আল্লাহর অকাতরে দান সত্ত্বেও বান্দার নাফরমানি লজ্জাজনক। আসলে এই সত্যের উপলদ্ধি তাদের মনেই জাগে, যাদের আল্লাহ ক্ষমা করতে চান। আসলে এই দোয়ার প্রত্যেকটি অংশই অনিন্দ্য সুন্দর।

فَاغْفِرْ لِي ‘ফাগফিরলী’ অর্থ: ‘অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ আসলে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অপরাধ স্বীকার করে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা যখন পাপ স্বীকার করে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।’ (সহিহ বুখারি: ২৬৬১; ফাতহুল বারি: ১১/১০৩)

فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ ‘ফায়িন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা’ অর্থ: ‘আপনি ছাড়া আর কেউ নেই, যে গুনাহসমূহ মাফ করে।’ এখানে বান্দা স্বীকার করছে যে, গুনাহ মাফকারী একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বান্দার গুনাহ মাফ করতে পারে না। পবিত্র কোরআনেও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়া কে আছে পাপ ক্ষমা করে?’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫) বান্দা সে কথাই স্বীকার করে নিয়ে নিজের গুনাহ ক্ষমা চাচ্ছে এখানে।

কত চমৎকার একটি দোয়া। এই দোয়ার অর্থ ও মর্ম জানা প্রত্যেকের উচিত। এই হাদিসের বর্ণনাকারী বিখ্যাত আনসারি সাহাবি হজরত শাদ্দাদ ইবনে আওস ইবনে সাবিত (রা.)। হাদিসটি ইমাম বুখারি (রহ) ছাড়াও ইমাম ইবনে আবি শাইবা, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইবনে হিব্বান, ইমাম নাসায়ি প্রমুখ স্ব স্ব সনদে বর্ণনা করেছেন। (দ্র. আলমুসান্নাফ, ইবনে আবি শাইবা: ৩০০৫২ ও টিকা শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা)

ইস্তেগফারের সর্বাধিক দামী দোয়াটি আমরা যদি মুখস্থ করে ফেলি এবং ভাব ও মর্ম উপলদ্ধি করে সকাল-সন্ধ্যায় মন থেকে পাঠ করি অনেক কল্যাণের ব্যাপার হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইতে তাওফিক দান করুন। আমিন।